চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়া পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা ডলু নদীর দুই তীর থেকে প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করার ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।
এলাকাবাসীর এমন অসংখ্য অভিযোগের সূত্র ধরে গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙন পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং সংসদ সদস্য ড. প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং মহালের ইজারা স্থগিত করে।
তবে স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে সম্প্রতি হঠাৎ করে ডলু বালি মহাল ৪ আবারো ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হতবাক ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
তারা অবিলম্বে জন বিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালি মহাল ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ চান। এ বিষয়ে একাধিক লিখিত আবেদন করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, আমরা অনেক বালু মহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। জেলা প্রশাসন কোন বালি মহাল ইজারা দেবে, কোন মহাল ইজারা দিবে না তা ঠিক করে না।
উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবু বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি ওঠেছে তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।
জানা গেছে, এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে।
এবার ডলু মহাল ৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে। এমন আশংকা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না উপজেলা প্রশাসন।
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪ নং বালি মহাল ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনে সুপরিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভী।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- বর্তমান সরকার ডলু ভাঙন রোধে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালি মহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।
তিনি বলেন, ডালুর বালি উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হবে। প্রাণহানীর আশংকাও রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজীর রয়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারো মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটিমাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষি জমি। তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪ নং বালি মহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।
নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালি মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
জেএন/পিআর