আজ ২২শে মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছর মার্চের ২২ তারিখ দিবসটি পালন করে আসছে বিশ্ব। আর ঠিক সেই জন্য, অন্যান্য দেশের মতো এবারও বাংলাদেশ পালন করছে ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩’।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা’। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এছাড়াও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম সরকার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন এমপি পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সরকারপ্রধান তার বাণীতে বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায়সঙ্গত পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও এর যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ তথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।’
এদিকে, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পানি আমাদের এই বিশ্বের প্রাণের উৎস। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি থেকে শুরু করে শিক্ষা ও অবকাঠামো পর্যন্ত সবকিছুতেই মানুষের টিকে থাকা ও ভালো থাকা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতির সমৃদ্ধির জন্য পানি অপরিহার্য। কিন্তু এই প্রাণের উৎসের প্রতিটি ফোঁটা দূষণের শিকার হচ্ছে, অতি ব্যবহারে অপচয় হচ্ছে। এদিকে চলতি দশকের শেষ দিকে পানির সরবরাহের তুলনায় চাহিদা ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন পানির প্রাকৃতিক চক্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে দূষণ যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি হচ্ছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছাচ্ছে। ফলে পানিজনিত দুর্যোগ, রোগের প্রাদুর্ভাব, পানির স্বল্পতা ও খরা বাড়ছে। পাশাপাশি অবকাঠামো, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য এসব ব্যর্থতার কারণে শত কোটি মানুষকে যে মূল্য দিতে হচ্ছে, তাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই মানুষগুলো নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’
মহাসচিব আরও বলেন, ‘বিশ্বের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৫ জনকে এখন পানির সার্বিক চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে হয় উন্মুক্ত জলপ্রবাহ ও পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে, নতুবা উচ্চ মূল্যে তথাকথিত নিরাপদ পানি কিনে। ২২ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত পরিবেশে কিংবা অপরিচ্ছন্ন, বিপজ্জনক অথবা ভাঙাচোরা শৌচাগারে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ৪৪ শতাংশের ক্ষেত্রে বর্জ্যপানি অপরিশোধিত অবস্থাতেই প্রকৃতিতে ফিরছে। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। আসুন, ২০২৩ সালকে আমরা পরিবর্তন এবং মানবজাতির প্রাণের উৎস রক্ষায় বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করি। পানির সুরক্ষা, টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সবার জন্য সমহারে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করি।’
১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১ এ প্রথম ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালিত হয় এবং তারপর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে।
জেএন/এমআর