আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাসের প্রথম দিনে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্য। বলা চলে এবারের রোজার শুরুতেই অস্থির হয়ে উঠেছে ভোগ্য পণ্যের বাজার।
মুরগির কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমলেও চিনির দামে মিষ্টির স্বাদ ভুলছে মানুষ, হাত দেয়া যাচ্ছে না সবজিতে। তবে পর্যাপ্ত আমদানি হওয়ায় স্থিতিশীল রয়েছে ছোলার দাম।
দেড়-দুই মাস আগ থেকে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। রমজান মাসেও তার হেরফের নেই। বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ ও তোড়জোড় থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব কিছুর দাম আকাশ ছোঁয়া। এখনো পড়ে রয়েছে পুরো মাস। সীমিত আয়ে কিভাবে সামাল দেবে সে আশঙ্কায় অস্বস্তিতে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।
নৈরাজ্য চলছে চিনির দরে। খেজুরও গেলো বছরের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে দাম। কাচা মরিচ, লেবুসহ অন্যান্য সবজিও প্রথম রমজানকে টার্গেট করে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাছ মাংসের দাম ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ভোগ্য পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। ইফতারির মুখরোচক খাবার বেগুনির উপাদান বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শসার দামও দ্বিগুণ বেড়ে দেশি শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শরবত তৈরির প্রধান উপকরণ লেবুর দামও বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। বড় লেবু ৭০ টাকা, মাঝারি ৬০ টাকা এবং ছোট লেবু ৪০ থেকে ৫০ টাকা হালি।
গাজরের কেজি ঠেঁকেছে কেজি ৭০ টাকায়। যে টমেটো কয়েকদিন আগে কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সে টমেটোর কেজি এখন ৫০ টাকা বলছে বিক্রেতারা। কাঁচা মরিচের কেজি বলছে ১০০ টাকার ওপরে।
প্রতিকেজি খোলা চিনি গেল সপ্তাহে যেখানে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা করে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা করে। তাও আবার খুচরা দোকানিরা অভিযোগ করছেন বস্তার রেট থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি দর দিয়ে তাদের তা কিনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে না বিক্রয় রশিদও। তাই ম্যাজিস্ট্রেট আসলে রশিদ দেখাতে না পারার আতঙ্কে তারা।
খোলা সয়াবিন ১৬৫, পাম অয়েল ১২৮ এবং বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা করে। সবচেয়ে বেড়েছে খেজুরের দাম। গেলো রমজানে যে খেজুর ৩০০ টাকা বিক্রি হয়েছে এবার তা ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে দাম। তবে পর্যাপ্ত আমদানি হওয়ায় স্থিতিশীল রয়েছে ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত।
নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং দেশি আদা কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। চীন থেকে আমদানি করা আদা ২৮০ টাকা কেজি। বড় আলুর দামও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে এখন ২৩ টাকা।
এদিকে রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগ থেকে বাড়তে থাকে বিভিন্ন মুরগির দাম। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে তিন দিন ধরে ব্রয়লার মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি করে বিক্রি হয়েছে।
সে তুলনায় আজ শুক্রবারের বাজারে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে নেমেছে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৪০ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে গরুর মাংস কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি খাসির মাংস। তাছাড়া রমজানকে টার্গেট করে বেড়েছে সবধরনের মাছের দর। প্রত্যেক মাছেই কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে একদিনের ব্যবধানে।
জেএন/পিআর