আজ শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জন্মদিন। আজ তার ৩৬তম জন্মদিন। ১৯৮৭ সালে আজকের দিনে মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই বাংলাদেশ ক্রিকেটার।
ক্রিকেটার হওয়ার গল্প
সাকিব গ্রামাঞ্চলের ক্রিকেট খেলতে গিয়েই হঠাৎ একদিন চোখে পড়ে যান এক আম্পায়ারের। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় মাগুরার ইসলামপুর পাড়া ক্লাবে। সেই ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে সাকিব প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেন। প্রথম বলেই তুলে নিয়েছিলেন উইকেট। প্রকৃত ক্রিকেট জীবনের শুরু সেই বল থেকেই।
৬ মাসের কোর্স করার জন্য বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন সাকিব। পরে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুযোগ পান অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার। এ ছাড়া জাতীয় লিগে খেলার জন্য তালিকাভূক্ত হন খুলনা বিভাগীয় দলে। ১৯ দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই সাকিবকে নিয়ে আসে সামনের সারিতে। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি-দেশিয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও ৩টি উইকেট নিয়ে দলকে জেতান তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ৩৫.১৮ গড়ে সংগ্রহ করেন মোট ৫৬৩ রান এবং ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।
২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে সাকিব প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। ওই সিরিজেই হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের।
ওয়ানডে অভিষেকের পরের বছরই ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্টে অভিষেক হয় সাকিবের। ২০০৬ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি। ২০০৯ সালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফির ইনজুরির কারণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একইভাবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর তার নেতৃত্বেই ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ।
২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন সাকিব। এই ধারাবাহিকতায় টেস্টেও নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করে সেরা অলরাউন্ডারের আসন দখল করেন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হন তিনি। ক্রিকেট বিশ্বে একমাত্র ঘটনা এটি।
ক্যারিয়ার
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৭ হাজার রান এবং ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং শহীদ আফ্রিদির পাশে নাম লেখান এই বাংলাদেশের পোস্টার বয়। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
এখন পর্যন্ত ২৩০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিব রান করেছেন ৭০৮৬। আর ৬৫ টেস্টে রান করেছেন ৪৩৬৭ এবং ১১২টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান ২২৮১। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩,৭৩৪ রানের মালিক সাকিব, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
টেস্টে উইকেট সংখ্যা ২৩১, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ৩০১। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উইকেট সংখ্যা ১৩১, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এবং বিশ্ব ক্রিকেটে দ্বিতীয়।
টেস্টে সাকিবের অর্ধশতক ৩০, শতক ৫ ও ক্যারিয়ার সেরা ২১৭ রানের ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটে অর্ধশতক ৫৩টি আর শতক ৯টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অর্ধশতক ১২টি, ক্যারিয়ার সেরা রান ৮৪।
ব্যক্তিগত জীবন
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি দুইটি কন্যা সন্তান এবং একটি পুত্র সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ের নাম আলাইনা হাসান অব্রি এবং ছোট মেয়ের নাম ইররাম। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ (বাংলাদেশ সময়) তৃতীয় সন্তানের বাবা হন সাকিব আল হাসান।
জেএন/এমআর