সব জিনিসের একটা মৌসুম থাকে। রমজানুল মোবারক হলো ইবাদত-বন্দেগির মৌসুম। মৌসুমের সময় কোনো জিনিস যত বেশি সঞ্চয় করা যায় অন্য সময়ে তা সম্ভব হয় না। এ মাসে বান্দা যত বেশি আমল করবে তার পরকালীন ভাণ্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করা। বাকি ১১ মাসের চেয়ে এ মাসে দানের ফজিলত অনেক বেশি। মহানবী সা: এই মাসে এত পরিমাণ দান-খয়রাত করতেন যে, হাদিসে তাকে বেগমান বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
মহানবী সা: এই মাসকে ‘শাহরুল মুওয়াসাত’ বা সহমর্মিতার মাস নামে অবহিত করেছেন। কেননা এক মাসের সাওম পালনের দ্বারা রোজাদার ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এর ফলে তার অন্তরে আর্তপীড়িত ও ব্যথিত মানবগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা জাগে। রোজাদারের উচিত তার এই জাগ্রত সহানুভূতিকে কাজে লাগানো এবং তাদের ব্যথা উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখা। তা বুদ্ধি-পরামর্শ ও কায়িক সহযোগিতা এবং দান-দক্ষিণা বিভিন্নভাবেই হতে পারে।
মুমিন ব্যক্তি অন্যের জন্য দুনিয়াতে যা দান করে মহান আল্লাহ তায়ালা তা অত্যন্ত যত্নশীলতার সাথে লালন করেন এবং তা ক্রমেই বৃদ্ধি করেন। আখিরাতে এই দান বহুগুণ বৃদ্ধি অবস্থায় সে ফেরত পাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-ঐশ্বর্য আল্লাহর পথে সদকা করে তাদের উপমা হলো যেন একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ শস্যদানা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা-২৬১)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা কতই না উত্তম, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, এতে তিনি তোমাদের কিছু পাপ দূর করে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’ (সূরা বাকারা-২৭১)
হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, মহানবী সা: মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন হজরত জিবরাইল আ:-এর সাথে সাক্ষাৎ হতো। রমজানে হজরত জিবরাইল আ: মহানবী সা:-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। হজরত জিবরাইলের সাথে সাক্ষাৎ হলে নবীজী মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেশি কল্যাণময় দানশীল হতেন। (সহিহ বুখারি-৩২২০)
হজরত আনাস রা: আরো বলেন, রাসূলল্লাহ সা:-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে উত্তম সদকাহ কী? তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সদকা’। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দান করতেন। (সুনানে তিরমিজি-২৩৫১)
হজরত আনাস রা: বলেন, ‘নবী করিম সা:-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি’। (সহিহ মুসলিম-১৮৪২)
দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে- ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাকো, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহিহ বুখারি-১৬৩১)
আমরা স্বভাবতই কমবেশি দান করে থাকি। কখনো দানের জন্য একটি মোক্ষম সময়ও আমরা অনুসন্ধান করি। সেই সেরা সময়টি হলো রমজান। রমজানের পবিত্র আবহে দানের বিষয়টি সম্পূর্ণই আলাদা। এর তাৎপর্য নিঃসন্দেহে অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি। তাই প্রিয় নবীজী এ মাসে বেশি দান করতেন এবং দানে উৎসাহিত করতেন।
আমাদের সমাজে এমন অনেক অসহায়-নিঃস্ব মানুষ আছেন, যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খান। বছরের অন্য সময় কোনোভাবে চলে গেলেও বর্তমান করোনা মহামারীতে তারা আরো দুর্ভোগ ও দুর্দশায় আছেন। অনেক মানুষ লজ্জায় মানুষের কাছে চাইতেও পারে না।
এ ধরনের মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য। এই ইবাদতের মৌসুমে দান-সদকার হাত প্রসারিত করে নিজেদের রমজানকে সার্থক করে তুলি। কারণ সর্বপ্রকার আমলে মুখর করে তোলাতেই রোজাদারের রমজানের সার্থকতা। যে রোজা আমলে ভরপুর থাকে সেই রোজার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য, আমি তার প্রতিদান দেবো’।
জেএন/এফও/এমআর