আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া চিঠির কোনও জবাব এখনও দেয়নি বিএনপি। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দুই দফায় সংলাপ বর্জন করা দলকে চিঠি দেওয়া নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘অনেকে বলতে চেয়েছেন, এটা সরকারের একটি কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যম পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই- এই পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনও সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এটা কেউ যদি এটাকে কূটকৌশল হিসেবে মনে করতে চান, তাহলে এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে; সরকারের নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনও কূটকৌশল হিসেবে এই কাজটি করেনি।’
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই চিঠি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন সিইসি। এসময় চার নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার পাঁচ দিন পর আজ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতেই এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
এসময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্যই চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূল জিনিসটা হলো— আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি, সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই উনাদের (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি— আনুষ্ঠানিক না হলেও, আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ; অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতিভাবে এ আহ্বানটা করেছি।’
গত বছরের শুরুতে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে দুই দফায় সংলাপ আয়োজন করে। কিন্তু সেই সংলাপ বর্জন করে বিএনপি। পাশাপাশি দলটি এখনও ‘নির্দলীয় সরকার’-এর অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সেই দাবি বাস্তবায়নের সম্ভাবনার কথা বরাবরই নাকচ করা হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেই গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে আলোচনায় অংশ নিতে চিঠি দেয় ইসি। তবে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকের কোনও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিএনপি আলোচনায় সম্মত কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক ডিও লেটার (আধা-সরকারিপত্র) দিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও দলের দলের নেতাদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিএনপি চাইলে ওই মতবিনিময়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ অংশ নিতে পারেন বলেও এতে বলা হয়েছে।
হঠাৎ নির্বাচন কমিশনের এমন উদ্যোগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিকে ভোটে আনতে এই চিঠির পেছনে সরকারের ‘ইন্ধন আছে’ এমন কথাও আকার-ইঙ্গিতে বলা হচ্ছে। তবে সংবাদ সম্মেলনে এমন এসব সমালোচনার জবাবে সিইসি জানালেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানোয় সরকারের কোনও সংশ্লিষ্ট নেই। দলটিকে আলোচনায় ডাকার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সিইসি বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার শেষ বেলা চিঠিটা দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনও জবাব আসেনি, ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শুরু থেকেই ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসি মনে করে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, নির্বাচনের স্বার্থে, দলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রয়োজন।’
জেএন/এমআর