জেসমিনের মৃত্যু: ১১ র‍্যাব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ

র‍্যাব হেফাজতে ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর অভিযোগ তোলে পরিবার। সুলতানা জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র‌্যাবের ১১ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাজশাহীর র‍্যাব-৫ এর কার্যালয়ে তাদেরকে ডেকে আনা হয়।

- Advertisement -

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত সদস্যদের ডেকেছে তদন্ত কমিটি।

- Advertisement -google news follower

এখনো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে তারা নিজ নিজ কর্ম এলাকায় চলে যাবেন।

ওই ১১ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়নি বলে জানান এ ব্যাব কর্মকর্তা।

- Advertisement -islamibank

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাব সদস্যদের ডেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে।

কমিটির তাদের কাছ থেকে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানবেন।

যেকোনো অভিযোগ তদন্তে র‌্যাব সদর দপ্তরের নিজস্ব ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল (আইইসি) রয়েছে। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তে গত ২৭ মার্চ আইইসির অধীনে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

এ কমিটি সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ, তাকে আটকের প্রক্রিয়া ও অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবেন।

র‌্যাব সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের সংস্থা আইন মেনেই যেকোনো অভিযান পরিচালনা করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটকের পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে র‌্যাবের অভিযান নিয়ে কোনো দুর্বলতা পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু একটি অভিযোগ উঠেছে তাই র‌্যাব সদর দপ্তরও বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিয়েছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া কোনো র‌্যাব সদস্যের গাফিলতি আছে কিনা, কারও কোনো অনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তদন্ত কমটি খতিয়ে দেখবে। কারও কোনো গাফিলতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ঘটনার বর্ণনায় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে এনামুল ২০২২ সালের মার্চে একটি জিডি করেন। এমনকি একজন মহিলা তার নামে আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন মর্মে আদালতে একটি মামলাও করেন এনামুল।

সর্বশেষ গত ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুলের নাম-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয় বলে তিনি জানতে পারেন। এ প্রতারণায় আলামিন ও তাকে জেসমিন নামে একজন সহযোগিতা করছেন বলেও প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ অফিস যাওয়ার সময় র‍্যাবের টহল টিম দেখে এনামুল এ বিষয়ে অভিযোগ করে সহায়তা চান। পরে এনামুলসহ র‌্যাবের টিম সুলতানা জেসমিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর অপর আরও দুই সাক্ষীর সামনে র‌্যাবের নারী সদস্যরা জেসমিনকে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এ সময় তিনি তার দোষ অকপটে স্বীকার করেন। তিনি জানান, তার মোবাইলে এনামুলের নামে খোলা ভুয়া ফেসবুক আইডি চালু ছিল। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্যও পাওয়া যায়। এদিন বেলা ১১ টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামতসহ জেসমিনকে একটি কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সেখানে তার মোবাইলের বিভিন্ন আলামত প্রিন্ট করে। সকল আলামত সংগ্রহের পর সদস্যরা জেসমিনকে নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য থানার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথে জেসমিন অসুস্থ বোধ করলে তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই হাসপাতালে যান। পরে তার স্বজন ও সহকর্মীদের সান্নিধ্যেই তিনি সেখানে চিকিৎসা নেন।

কমান্ডার মঈন আরও জানান, জেসমিন স্ট্রোক করতে পারেন এমন ধারণা করে সেদিন সন্ধ্যায় নওগাঁ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যেতে বলেন। র‌্যাব সদস্যরা তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সিটি স্ক্যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত আলামত দেখতে পান চিকিৎসকরা। তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ২৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিনের মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক জেসমিনের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছেন। ময়নাতদন্তেও বিষয়টি বের হয়ে আসবে। যেহেতু একটি অভিযোগ এসেছে আমাদের হেফাজতে অসুস্থ হয়েছিলেন; বিষয়টি তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন ও সদস্যরা কাজও শুরু করেছেন। আমাদের কোনো সদস্যের কোনো গাফিলতি আছে কিনা বা অনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখে সমস্যা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী ছিলেন। এ ঘটনা তদন্তে র‌্যাবের একটি দল রাজশাহীতে রয়েছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM