চৈত্রের শেষের দিকে এসে তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা মাঝারি ধরনের এই তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
ধারাবাহিকভাবে টানা ৯ দিন দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান।
এদিকে পবিত্র রমজান মাসে প্রচণ্ড গরম হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে লোকের আনাগোনাও কমে যাচ্ছে। অর্ধেক রমজান অতিবাহিত হলেও শহরের কাপড়ের মার্কেটগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কিছু ক্রেতা আসলেও ঈদের বাজার পুরোপুরি জমে উঠেনি।
চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গা ক্লথ স্টোরের মালিক ফয়সাল বলেন, আগে ১০ রমজান থেকে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠতো। আজ ১৮ রমজান হলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্রেতাদের তেমন দেখা মিলছে না। সন্ধ্যার পর শহরের কিছু ক্রেতা আসছেন। তাপদাহ কেটে গেলে ঈদ বাজার জমে উঠবে।
শহরের কলেজ রোডের ফুটপাতে তরমুজ ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, রমজানের শুরুতে সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের আনাগোনা থাকতো। গরম পড়ায় কয়েক দিন ধরে বিকেলে ক্রেতারা আসছেন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। বিকেল হলেই শরীর আর চলছে না। এই গরমে পেটের দায়ে আমাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী ইমদাদুল হক বলেন, কয়েকদিন ধরে চলাচল করা কঠিন হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে ফ্যান চললেও তাতে কাজ হচ্ছে না। বাইরে বের হলে তীব্র গরমে শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, এখন ভুট্টা কাটা ও বোরো ধানের ভরা মৌসুমে তীব্র খরা। প্রতিদিন ধানে পানি দেওয়া লাগছে। বৃষ্টির দেখা নেই। আবার ভুট্টা কাটতে হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের প্রচণ্ড তাপে মাঠে কাজ করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দুই বছরের ছেলে সাদিককে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা শারমিন আরা বলেন, গত দুদিন হাসপাতালে আছি ছেলেকে নিয়ে। ওয়ার্ডের সব ফ্যান চললেও আমার মাথায় ওপরের ফ্যানটা নষ্ট। এই গরমে ছোট বাচ্চা ছটফট করছে। বাধ্য হয়ে হাতপাখা কিনে বাতাস দিতে হচ্ছে। তবে রাতের বেলা কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ধারাবাহিকভাবে টানা ৯ দিন দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
জেএন/এমআর