‘যারা ভাবেন ভোট চাওয়ার জন্য প্রার্থী আপনাদের কাছে যাচ্ছে, তাকে হয়তো নির্বাচনের পর পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে নোমান আল মাহমুদ জিতলে। তবে নির্বাচন যত কাছে আসছে ষড়যন্ত্র গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আমাদের দলের যে সাংগঠনিক শক্তি আছে আমরা যদি নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে সরব উপস্থিতি থাকি, তবে বিপক্ষ শক্তি যতই চেষ্টা করুক তাদের ষড়যন্ত্র আলোর মুখ দেখবে না।’
রোববার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের নৌকা প্রতীকের সমর্থনে বোয়ালখালী ৯ নম্বর আমুচিয়া ইউনিয়নের সনাতনী সমাজের পক্ষ থেকে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের আয়োজন সাধরণত প্রার্থীর পক্ষ থেকে করা হয়। কিন্তু আপনারা সপ্রণোদিত হয়ে এই আয়োজন করে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এর জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের ক্যাম্পিংয়ে বোয়ালখালী আসনের যে পরিমাণ সমর্থক দেখেছি, এতে মনে হচ্ছে অন্তত ৫৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর জন্য ডোর-টু-ডোর ক্যাম্পিং করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুখে আমরা দলের জন্য যা প্রকাশ করি, তা মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বাস্তবে তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যার কারণে আমাদের কর্মকাণ্ডে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হচ্ছে। বিগত দিনের রাজনীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনের নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের ২৭ জন দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন বলে জানান আ জ ম নাছির। এর মধ্যে সব চেয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষ নোমান আল মাহমুদ। তাকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি অনেক সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি সংগঠনের বিষয়ে কারোর সঙ্গে আপোষ করেননি। ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ তিনি।
তিনি বলেন, লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সকলেই বেশ বিত্তশালী। কিন্তু এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী এক মনোনয়ন চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটাররা দেখতে পেয়েছেন। এছাড়া তৃণমূল রাজনীতিবিদদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়টা তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমার ধারণা, তাদের ধারাবাহিক কাজে প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে এমন তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের মনোনয়ন দেওয়ায় উদ্বুদ্ধ হবেন।’
নোমানের মনোনয়নে কোনো বিভক্তি আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এতে আমাদের চিন্তার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। রাজনৈতিক পদ-পদবির প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে নোমান আল মাহমুদ মনোনয়ন পাওয়ার পর তৃণমূলে কোনো ধরনের বিভক্তি দেখা দেয়নি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে মাঠে নেমে পড়েছে। যা অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয়।
আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের হবে বলে জানান আ জ ম নাছির। তিনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগে রাজনীতি করেন তাদের মনে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাব কাজ করতে পারে না। তারা আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করেন। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও বাংলার মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলেন।’
দেশের মানুষকে বিভ্রান্তকারী শক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশ শ্রীলঙ্কা হবে বলেছিলেন যারা, তাদের বক্তব্য এখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। দেশনেত্রীর বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো অবস্থাতেই ঝুকিপূর্ণ পর্যায়ে যায়নি। উল্টো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সফল পর্যায়ে আছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মনোনীত চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু আমাদের যেভাবে রাজনীতি শিখিয়েছেন সেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করেছি। আমরা রাজনীতি করি আদর্শের জন্য ভোগের জন্য নয়। আমাকে মানুষ এত ভালবাসে তা নির্বাচনী ক্যাম্পিংয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়ে দেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, আপনাদের ভোটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-৮ আসনের মানুষে জন্য আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, চিন্তা-চেতনা সেটাকে আরও বেগবান করবে। বঙ্গবন্ধুর শেখানো পন্থায় জনগণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করবো।’
এদিকে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে ভোট দিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সর্বস্তরের জনগণের সেবা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিন পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও প্রকাশক আয়ান শর্মা।
৯ নম্বর আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল দে’র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দে, বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগের সংগঠক প্রণয় দাশগুপ্ত শিমুল, অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মধুসূদন দাস, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, বোয়ালখালী পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি পার্থ সারথি চৌধুরী, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাসসহ ইউপির বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেএন/এমআর