শহর-গ্রামে বেড়েছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি: জনদুর্ভোগ চরমে

চট্টগ্রাম শহর কিংবা গ্রামে গেল কদিন ধরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের বিভ্রাট। চলছে ভেলকিবাজি। কোনোভাবেই থামছে না লোডশেডিং।

- Advertisement -

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে মহানগরীর প্রত্যেকটি এলাকা, উত্তর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এটিকে একধরনের ভেলকিবাজি বলছে জনগণ।

- Advertisement -google news follower

একদিকে বৈশাখের তীব্র তাপাদাহ অন্যদিকে বিদ্যুতের এমন আসা যাওয়া চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। কেউ কেউ দুষছেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের। বলছেন তারা কারসাজি করে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ইচ্ছে করেই এমনটা করছে।

তবে পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন গরমের কারণে বিদ্যুতের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তীব্র গরমে সামান্য বিদ্যুৎ বিভ্রাটও মানতে চাইছেন না গ্রাহকরা। আবার চাইলেই জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে চাহিদা মেটাতে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।

- Advertisement -islamibank

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ছোট, বড় মোট ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে খুঁড়িয়ে চলছে ৬টি। অপরদিকে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে চলছে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে ৯টি এবং কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। যেসব কেন্দ্র এখন চালু রয়েছে সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫৮ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

ফলে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। নগরীতে দিনে ও রাতে মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাতবার এবং উপজেলায় দিন-রাত মিলে অন্তত ১০ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ যাচ্ছে।

একবার বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টা পার হলেও আসে না। কখনো কখনো দেড় ঘণ্টা পর আসে। আবার বিদ্যুৎ এলেও কিছুক্ষণ থাকার পরই আবার চলে যায়। অনেক উপজেলায় রাতে মোটেও থাকছেনা। আসলেও ১৫ মিনিট থেকে আবার চলে যায়। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

গ্রাহকদের অনেকেই বলছেন, রমজান মাসেও দিনে সাত থেকে আটবার এবং গভীর রাতে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে রাত ১২টার পর বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং এর অভিযোগ করছে।

অনেকেই বলছেন ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় যেতেই লোডশেডিং হচ্ছে। পরপর প্রতিদিনই যখন এটি হচ্ছে তখন এটিকে ঠিক যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কিছু বলে চালানোর সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন পটিয়া পৌর সদরের ২ নং ওয়ার্ডের একজন গ্রাহক।

জানা যায়, চট্টগ্রামে এখন চলমান তাপদাহে দিনের বেলায় (সকাল ১১টায়) বিদ্যুতের চাহিদা ১৩৫৪ মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে ৬৪৫ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকেসহ চট্টগ্রামে দিনের বেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১১০১ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করা হয় ২৫৩ মেগাওয়াট।

অপরদিকে বিকাল ৫টা থেকে চট্টগ্রামের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪১৪ মেগাওয়াটে। এখন জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যায় ১২৩৯ মেগাওয়াট। তখন লোডশেডিং করা হয় ১৭৭ মেগাওয়াট।

পিডিবি’র প্রকৌশলীরা বলেন, চট্টগ্রামে এমনিতেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন গড়ে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিংয়ের ঘটনা ঘটছে।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য মতে, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। চালু থাকা একমাত্র কেন্দ্রে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।

রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের ২টি (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে) বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিকলবাহা ২২৫ মেগওয়াট ও ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটিও অনেক দিন থেকে বন্ধ। ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক বন্ধ। এদিকে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফ সোলার প্ল্যান্ট ও কাপ্তাই সোলার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে।

শিকলবাহা জুডিয়াক পাওয়ার প্ল্যান্টে ৫৪ মেগাওয়াট, দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ৭৯ মেগাওয়াট, ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নামমাত্র ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

৩০০ মেগাওয়াটের জুলধা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৭৭ মেগওয়াট, ২৬ মেগাওয়াটের আরপিসিএল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এদিকে ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নামমাত্র ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা বারাকা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৮৫ মেগাওয়াট, ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নামমাত্র ৩৩ মেগাওয়াট, ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে অর্ধেকেরও কম মাত্র ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ১১৬ মেগাওয়াটের আনলিমা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুধুমাত্র ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM