কক্সবাজারের নাজিরারটেক এলাকায় ভাসমান ট্রলার থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১০ জনের মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না। মরদেহগুলো পচে যাওয়ায় শনাক্ত করতে পারছেন সম্প্রতি সাগরে নিখোঁজদের স্বজনরা। নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।
রোববার (২২ এপ্রিল) দুপুরে একটি ট্রলার ভেসে আসার পর মরদেহ দেখে পুলিশকে জানান স্থানীয় জেলেরা। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।
এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, এসব মরদেহ গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ১৪ জেলের ১০ জনের হতে পারে।
কক্সবাজারের মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলার জেলেদের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৭ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার মৃত রফিক আলমের ছেলে শামসুল আলম তার নিজস্ব মালিকানাধীন একটি ট্রলার নিয়ে ১৪ জেলেসহ সাগরে মাছ ধরতে যান। এর তিন দিন পর ১০ এপ্রিল সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা কালারমার ছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে বাবু জানান, ওই ট্রলারের ১৪ জেলে অপর একটি ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে কয়েকটি ট্রলার ঘিরে আটকে ফেলে। এরপর ১৪ জনকে আটকে দিয়ে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেয়। ওই ট্রলারে বাবুর আপন ভাই হায়াত উল্লাহও ছিলেন। এরপর থেকে ট্রলারের মালিক শামসুল আলমসহ ১৪ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন- মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আঁধারঘোনা গ্রামের ছালেহ আহমদের ছেলে আব্দুল মালেক (২৫), মোহাম্মদ রিদুয়ান (২৩), আব্দুস সালামের ছেলে মো. হায়াত (২৪) , দানু মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান (২৬), আকবর আলীর ছেলে মাহবুব আলম (২৮), মো. শরীফের ছেলে নুরুছামাদ (২৭), ছামিরাঘোনা এলাকার আবু জাফরের ছেলে নজরুল (২৭), অফিসপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন (২৫), শাপলাপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে মো. শওকত উল্লাহ (১৮), মুসার ছেলে উসমান গণি (১৭), শাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৩) এবং মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (৪৫)।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মহেশখালীতে নিখোঁজের একটি তথ্য শোনা যাচ্ছে। তবে মরদেহ পচে যাওয়ায় শনাক্ত করা কষ্টকর।
ওসি জানান, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল এবং পচে গেছে। সাগরে যাদের আত্মীয়-স্বজন নিখোঁজ আছে এ রকম বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন শনাক্ত করতে, কিন্তু তারা কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারেননি।
এদিকে নিখোঁজ জেলে আব্দুল মালেকের বাবা ছালেহ আহমেদ বলেন, মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসছি। তবে এখানে যে মরদেহগুলো উদ্ধার হয়েছে সেগুলো চেনা যাচ্ছে না। আমার ছেলে আব্দুল মালেক গত ৭ এপ্রিল সাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার সন্ধান পাইনি। তবে আজ যে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে আমার ছেলেও থাকতে পারে। লাশগুলো উদ্ধার হাওয়ার পর আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করা হবে। তাই আমরা হাসপাতালে আসছি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মরদেহগুলো যেহেতু একদম পচে গেছে, সে কারণে শনাক্ত করা যায়নি। তবে আমরা ডিএনএ সংরক্ষণ করছি। তা পরীক্ষা করে মরদেহ শনাক্ত করা হবে।
জেএন/এমআর