চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার থেকে বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া ও চন্দনাইশসহ ১৫ টি উপজেলার বাসিন্দারা ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পযর্ন্ত সব৴শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫ উপজেলায় মোট ২৬৪ জন নারী-পুরুষ-শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
২৪০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এরমধ্যে বোয়ালখালীতে আক্রান্ত ৫০ জন, চন্দনাইশে ৩৩ জন, পটিয়ায় ৩২ জন ও আনোয়ারায় ২৯ জন।
ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে সময়োপযোগী উদ্যোগসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কারণ অনুসন্ধান করে ডায়রিয়া আউট ব্রেক ইনভেষ্টিগেশন প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছে-ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি (সভাপতি), সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি (সদস্য সচিব) ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা (সদস্য)।
কমিটির সদস্যগণকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক আগামী ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে ডায়রিয়ার কারণ, বর্তমান ব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধের উপায় ও সুপারিশ ইত্যাদি উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বরাবরে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ ৪ মে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক অফিস আদেশের বরাদ দিয়ে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জনের আদেশে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধিতে জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণের বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনয়নের জন্য সকল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তাকে কতিপয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ডায়রিয়া/পানিবাহিত রোগে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ঔষধ চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রাখতে হবে।
এ চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন অনুসরণ করে কলেরা সনাক্তকরণ কিট ব্যবহার করতে হবে। রোগের চিকিৎসার তথ্য ডিআইএইচএস-২ এর মাধ্যমে রিপোর্ট করতে হবে।
রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পেলে সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবহিত করতে হবে। এ রোগের স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে।
দৈনন্দিন ডায়রিয়া রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি ইউনিয়নে ১টি ও প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে মেডিকেল টিম পুনঃগঠন করে প্রস্তুত রাখতে হবে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা কন্ট্রোল রুম (ফোন নাম্বারে ০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩) খোলা থাকবে। ডায়রিয়া বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণ একান্ত জরুরী।
স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ ও স্যানিটারী পরিদর্শকদের ফোকাল পারসন মনোনীত করে সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ডায়রিয়া/পারিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে মসজিদ ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে।
মাইকিংয়ে যে সকল বিষয় গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-নিরাপদ পানি পান করা নিশ্চিত করতে হবে। স্যানিটারী ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাসি ও খোলা জায়গায় খাবার গ্রহণ না করা। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ও মাস্ক পরিধান করা। হাত ধোঁয়ার অভ্যাস নিশ্চিত করা। একইসাথে স্যানিটারী ইন্সপেক্টরদের বাজার মনিটরিং ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার ও প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডায়রিয়া সর্ম্পকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএইচসিপিদের স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
জেএন/পিআর