পেশাগত অবদানের জন্য একজন পুরুষসহ সাত নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড- ২০২৩ প্রদান করছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন পুলিশ (IAWP)।
কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ) মাহমুদা বেগম। চলতি বছর ১৭ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর- ৫ দিন ব্যাপী এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
জননিরাপত্তার উন্নতি, অপরাধ ও অপরাধমূলক আচরণ হ্রাসসহ সামাজিক বৈষম্য নিরসন এবং নিজ বাহিনীসহ সাধারণ নাগরিকদের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে অনুকরণীয় ভূমিকা রাখাসহ পুলিশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হওয়ায় কিমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান হয়।
গত ৪ মে, বৃহষ্পতিবার এক টুইট বার্তায় অ্যাওয়ার্ডের বিষয়টি ঘোষণা করে আইএডব্লিউপি।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মাহমুদা বেগম। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা সর্বশক্তিমান আল্লাহর। আমি “কমিউনিটি সার্ভিস” বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন পুলিশ (IAWP) স্বীকৃতি পুরস্কার এর জন্য নির্বাচিত হয়েছি।
এটা সত্যিই আমার জন্য গর্বের, সম্মানের এবং কর্মের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। তিনি আরও বলেন,আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ মানুষের সেবা প্রদানের আমার আন্তরিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি সরূপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন পুলিশ আমাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
মাহমুদা বেগম আইএডব্লিউপি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এর জন্য নির্বাচিতরা হলেন, কমিউনিটি সার্ভিসে ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম ( Mahmuda Begum, ব্রেভারি (সাহসিকতা) ক্যাটাগরিতে বেডফোর্ডশার পুলিশের কনস্টেবল পাত্রিজিয়া ভেটেরি ( Patrizia Vetere), মেন্টরস অ্যান্ড কোচিং ক্যাটাগরিতে জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ ইন্সপেক্টর ইভ রোজার ( Eve Rodgers), লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে ইউক্রেনের পুলিশ মেজর ওলহা ইউসকেভিচ (Olha Yuskevych), প্রিভেনশন অ্যান্ড ডিটেকশন অফ ভায়োলেন্স এগইনেস্ট ওমেন ক্যাটাগরিতে কেনিয়ার পুলিশ সুপার জিপ্পুরাহ এনদেরিতো (Zippurah Nderitu), সিভিলিয়ান অফ দ্য ইয়ার দুবাই পুলিশের সিভিল এমপ্লয়ি রিম আল মুহাইরি ( Reem Al muhairi), এক্সিলেন্স ইন পারফরমেন্স ক্যাটাগরিতে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের ডিটেক্টিভ পুলিশ সুপার সিমুন ভান দের স্লয়িস ( Simone Van Der Sluys), হি ফর শি ক্যাটাগরিতে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের পুলিশ জেনারেল লিস্টঅও সিগিত প্রাভো (Listyo Sigit Prabowo)।
১৯১৫ সাল থেকে নারী পুলিশ অফিসারের মানোন্নয়ন, শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ পুলিশ উইমেন।
পরবর্তীতে ১৯৫৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন পুলিশ (IAWP) নামে সংস্থাটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
আইএডব্লিউপি আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশ নারীদের স্বার্থ রক্ষাসহ মানবাধিকার সুরক্ষিত বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। অ্যালিস স্টেবিন্স ওয়েলস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পুলিশ সদস্য যিনি অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন।
২৮তম বিসিএসের পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০১০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। পরে প্রশিক্ষণ শেষ শিক্ষানবীশ হিসেবে যোগদান করেন সিলেট জেলা পুলিশে।
পরবতীর্তে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপিতে দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী কমিশনার সদর ও ট্রাফিক হিসেবে।
সিএমপিতে থাকাকালীন ২০১৩ সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে সোয়াত প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা তিনি।
সিএমপিতে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে জাতিসংঘ মিশনে যান মাহমুদা। মিশনে থাকাকালীন একই বছর পদোন্নতি পেয়ে হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেখান থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে।
২০১৯-২০ সালের বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ (পিএম) পেয়ে অপরাধবিজ্ঞানে (Criminology) স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) অধ্যয়ন করতে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভাসিটিতে যান মাহমুদা বেগম।
দীর্ঘ দেড় বছর অধ্যয়ন শেষে গত ৩১ আগস্ট-২০২১ ইংরেজি তারিখে অপরাধবিজ্ঞানে মেধাতালিকায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মেধাবী এই কর্মকর্তা।
এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদেন রাঙামাটি জেলা পুলিশের। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশে।
সিএমপিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পান মাহমুদা বেগম। তৎকালীন ১১ বছর বয়সী একজন ভারতীয় শিশু কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসে। সেই সময় শিশুটি শুধু নিজের দেশের নাম ভারত ছাড়া আর কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
মাহমুদা বেগম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহায়তায় অসহায় ভারতীয় শিশুটিকে ভারতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রশংসিত হন। এছাড়াও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে ফরমালিনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এক সাহসী অবদান রাখেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অপরাধ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা এ নারী ব্যক্তি জীবনে এক সন্তানের মা। স্বামী গণমাধ্যমকর্মী।
কুমিল্লার তিতাসে পৈতৃক বাড়ি হলেও বাবার চাকরী সূত্রে জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা এ এফ এম জাহেদুল ইসলাম সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।
জেএন/পিআর