কার্লো আনচেলত্তির প্রথম মেয়াদে ২০১৪ সালে কোপা দেল রে’তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এরপর স্পেনের দ্বিতীয় সেরা এই টুর্নামেন্টটিতে বার্নাব্যু ফুটবলাররা সেই উৎসবে শিরোপার দেখা পায়নি। ৯ বছর পর রিয়ালকে না পাওয়া স্বাদ দিলেন আনচেলত্তি। দুই ব্রাজিলিয়ানের নৈপুণ্যে স্প্যানিশ জায়ান্টরা সেই উৎসবের উপলক্ষ্য পেয়েছে।
শনিবার (৬ মে) সেভিয়ার মাঠে রিয়ালের একাদশেই ছিল আনচেলত্তির চমক। বলা হচ্ছে এমন অবাক করা একাদশ আসরের ১২০ বছরের ইতিহাসেও দেখা মেলেনি। কারণ একমাত্র স্প্যানিশ ফুটবলার দানি কারবাহালকে রেখে শুরুতে মাঠে নামে রিয়াল। তাদের আগের ম্যাচের চেয়ে ফাইনালের একাদশেও ছিল পাঁচ পরিবর্তন।
এদিন ওসাসুনাও নেমেছিল ক্লাবের ১০৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম কোনো ট্রফি জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। শুরুতে পিছিয়ে গেলেও, তারা হড়কে যায়নি। রিয়ালের চোখে চোখ রেখে সমতা গড়ে জমিয়ে তুলেছিল দ্বিমুখী লড়াই। তবে শেষ হাসি হাসতে পারেনি দলটি। ২-১ গোলে হেরে যায় তারা। এর আগেও ওসাসুনা প্রতিযোগিতাটিতে ২০০৫ সালের ফাইনাল খেলেছিল।
সেভিয়ার এস্তাদিও দি অলিম্পিকো মাঠের গ্যালারিতে তখনও সবাই ঠিকঠাক মতো আসনও গ্রহণ করেনি। রেফারি বাঁশি বাজানোর পৌনে দুই মিনিটের মাথায় ম্যাচে লিড পেয়ে যায় রিয়াল। বাঁ উইংয়ে দুর্দান্ত খেলে বলের যোগান দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে দেওয়া তার পাস থেকে বাঁ-পায়ের শটে বল জালে জড়ান রদ্রিগো। আসরটির ফাইনালে এটি ৭৭ বছরের মধ্যে দ্রুততম গোল। আর তাতে শিরোপা উৎসবের দৌড়ে শুরুতেই আনন্দের জোয়ারে ভাসে সবমিলিয়ে ২০তম কোপা দেল রে জেতা ক্লাবটি।
পিছিয়ে পড়া ওসাসুনা এরপর গোল শোধ করার লক্ষ্যে বুক চিতিয়ে খেলতে থাকে। ২৬ মিনিটে গোল লাইন থেকে ওসাসুনার এজালজৌলির শট ফেরান দানি কারবাহাল। তার এক মিনিট আগেই প্রতি আক্রমণ থেকে করিম বেনজেমার জোরাল শট ঠেকান ওসাসুনা গোলকিপার সার্জিও এরেরা। তবে ভাগ্য সহায় হলে রিয়াল বিরতির আগেই আরও একটি গোল পেয়ে যেত। ৩২ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ডেভিড আলাবা একটুর জন্য গোল পাননি। বল পোস্ট লেগেছে।
বিরতির পর ৫৮ মিনিটে পাবলো তোরোর দুরপাল্লার শটে করা গোলে সমতায় ফেরে ওসাসুনা। কিন্তু দলটির বক্সে রিয়ালের খেলোয়াড়দের চাপসৃষ্টি দেখে বোঝা যাচ্ছিল ওসাসুনা বেশিক্ষণ সমতায় থাকতে পারবে না। রদ্রিগোর গোলটি সেই চাপেরই ফসল।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে আবারও প্রথম গোলের মতোই আক্রমণ রিয়ালের। ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে ভিনিসিয়াসের বাঁ প্রান্ত ধরে বক্সে ঢোকার পর তার ক্রস আরেক ডিফেন্ডারের পায়ে বাধা পায়। তবে পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেনি ওসাসুনা। টনি ক্রুসের শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল পেয়ে যান রদ্রিগো, বাকিটা অনায়াসে সারেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
কিছুটা চোট থাকায় এদিন লুকা মদ্রিচকে শুরু থেকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন আনচেলত্তি। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল থাকায় ক্রোয়াট তারকাকে নামালে নামালেও সেটি বিরতির পর বলে মনে হয়েছিল। ৮২ মিনিটে টনি ক্রুসের বদলি হয়ে যখন মদ্রিচ নামালেন রিয়াল তখন জয়ের সুবাস পাচ্ছে। বাকি সময়ে ব্যবধান বাড়ানোর ভালো দুটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি আলাবা ও বেনজেমা। যোগ করা সময়ে সুযোগ হারায় ওসাসুনাও। আর এরপরই শুরু রিয়ালের উৎসব।
চলতি মৌসুমে রিয়ালের লা লিগা শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা একরকম শেষই হয়ে গেছে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা টিকে আছে ভালোভাবে। আগামী মঙ্গলবার সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হওয়ার আগে এই জয় নিশ্চিতভাবেই বেনজেমা-ভিনিসিয়াসদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে।
জেএন/এমআর