খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের জন্য মোড়া বানিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। বিপণন প্রক্রিয়া সহজ ও ভালো লাভ হওয়ায় নারীরা দিন দিন মোড়া বানানোর কাজে ঝুঁকছে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের বানানো এসব মোড়া সংগ্রহ করে পাইকাররা। বেশ কয়েকটি পাহাড়ির পল্লীর প্রায় শতাধিক মহিলা ঘরে ঘরে এসব মোড়া বানানোর কাজ করছে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পাহাড়ের এসব পল্লীতে মোড়া বানানোর ছোট ছোট কুটির শিল্প গড়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে মাটিরাঙার হাতিয়া পাড়া, নবীনগর, কাজী পাড়া এসব মোড়ার গ্রাম নামেই পরিচিত পেয়েছে। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে এসব গ্রামের নারীরা অবসরে এসব মোড়া বানিয়ে সংসারের খরচ জোগাচ্ছে।
মাটিরাঙার অদূরের নিভৃত পল্লী কাজী পাড়া। এই পাড়ার প্রায় প্রতি ঘরেই মোড়া বানানো হয়। কাজী পাড়ার বাসিন্দা রহিমা বেগম জানান, ‘প্রায় ১৩ বছর মোড়া বানাচ্ছি। সংসারের কাজের অবসরে মোড়া বানানোর কাজ করি। একসময় বেতের মোড়া বানানো হলেও বর্তমানে প্লাস্টিকের বেতের মাধ্যমে মোড়ার কাজ করি। প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ জোড়া মোড়া বানাতে পারি।
হাতিয়াপাড়ার প্রায় প্রতিটি পরিবারেই বানানো হয় মোড়া। পাড়ার বাসিন্দা পারভীন আক্তার জানান,‘ অবসর সময়ে বসে মোড়া বানাই। এতে বাড়তি উর্পাজন হয়। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঘরের মহিলারা এসব মোড়ার কাজ করছে। অনেক পরিবার মোড়া বানিয়ে সংসার চালায়। বাজার থেকে মোড়া বানানোর প্লাস্টিকের বেত সংগ্রহ করা হয়। প্রতি জোড়া ছোট মোড়া উৎপাদনে খরচ পড়ে ২শ টাকা, মাঝারি মোড়ায় ২শ ৫০ টাকা এবং বড় সাইজের মোড়া উৎপাদনে খরচ পড়ে ৩৪০ টাকা। বিভিন্ন আকারের মোড়া ৩০০ থেকে ৬’শ টাকায় কিনে নেয় পাইকাররা । অনেক পরিবার মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসহায় হতদরিদ্র নারীরা নিজের হাতে বানানো মোড়া বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছে। তবে প্রশিক্ষণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি পাহাড়ের একটি সম্ভাবনা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে। অনেকে পুঁজির অভাবে পাইকারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনে নেয়।
দীর্ঘদিন ধরে মোড়ার বিপণনের কাজ করছে পাইকার মো. আশরাফ আলী। তিনি জানান, গ্রামের মহিলারা মূলত এসব মোড়া বানায়। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে তৈরিকৃত মোড়া কিনে নিয়ে আসি। অনেককেই মোড়া বানানোর জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে দিই। প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ জোড়া সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাই। এতে ভালোই লাভ হয়।
জয়নিউজ/জুলফিকার