আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে (কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ) পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৮টি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, গত ১০ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি বৈঠকে ৬ নম্বর এজেন্ডায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তা নিতে সেতু কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেতু কর্তৃপক্ষ টানেলের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় ৮টি বিশেষ নির্দেশনা দেয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু টানেলের ৯৭ দশমিক ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। টানেলের মূল কাজ শেষ হলেও বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবেশ মুখে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের মোহনা পতেঙ্গায় টানেলের প্রবেশ মুখ হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ে টানেলের উভয় প্রবেশমুখ (পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্ত) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া টানেল নির্মাণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় নির্মাণ উপকরণ ও ভারী যন্ত্রপাতি টানেলের প্রবেশ মুখে থাকায় ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। যার কারণে সেতু কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনায় শনিবারের মধ্যেই টানেলের সুরক্ষায় ৮টি বিশেষ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু টানেলের দুই প্রান্তের ফ্ল্যাড গেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শগ্রহণপূর্বক পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সার্ভিলেন্স টিম প্রস্তুত রাখা, প্রকল্পে কর্মরত সবার জানমালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত যানবাহনসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী (ক্রেন, স্ক্যাভেটর, ডিভাইডার, পাইপ, টিন ইত্যাদি) নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘূর্ণিঝড়জনিত যে কোনো উদ্ভূত সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রাপ্ত নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন চলমান প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক এবং প্রকল্প পরিচালককে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোখা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, টানেল বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় হওয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি অনেক বেশি। এ কারণে সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার সেতু বিভাগের এসব নির্দেশনা মেনে টানেলের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য টানেলের নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। প্রায় ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার (উভয় মুখে দুটি টানেল টিউব) টানেলটি চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার ও পার্বত্য বান্দরবান জেলার সঙ্গে সংযোগ ঘটাবে। চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মতো বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের অর্থনীতিতে অন্য মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
জেএন/এমআর