দেশে প্রথমবারের মতো অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে এক যুবকের পেটের ভেতর থেকে ১৫টি আস্ত কলম বের করেছেন চিকিৎসকরা। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের একদল চিকিৎসক।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে কাজটি করেন সেখানকার সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম, কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান ও তাদের দল।
জেলার বেলকুচি উপজেলার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন মোতালেব হোসেন হোসেন (৩৫) এর পেট থেকে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে কলম ১৫টি বের করা হয়। এর আগে ১৬ মে হাসপাতালে ভর্তি হন মোতালেব।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ও এন্ডোস্কপি করা চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম ও কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীটি প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিল। পরে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে কনসালটেন্ট হিসেবে রোগীটি আমার কাছে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আমরা এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই, এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, বিষয়টি মোটেও ছোট ছিল না, আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটা। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে যেন কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। রোগী সার্জারি বিভাগের চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন।
ডা. জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দুটি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একটা মোবাইল বের করেছিলেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেককিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসাইন বলেন, এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় একটা সাফল্য। এটা বাংলাদেশের মধ্যে বিরল।
তিনি বলেন, এই এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে শুধু এন্ডোস্কপি নয়, কোলনস্কপি ছাড়াও আরও অনেক কাজ করা হয়ে থাকে। তবে অ্যাস্ট্রোলজির একজন দক্ষ চিকিৎসক ল্যাব টেকনিশিয়ান পেলে আমাদের কাজগুলো আরও এগিয়ে যেত।
জেএন/এমআর