জয়নিউজে গতকাল (৪ আগস্ট) রাতে শেষ সংবাদ হিসেবে আপডেট হয় খেলার একটি সংবাদ। যার শিরোনাম ছিল ‘শুভ সকালের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’। যে সকালটার জন্য পুরো জাতি প্রতীক্ষায় ছিল সেই প্রতীক্ষার সমাপ্তিটা হয়েছে দারুণভাবে।
ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পরাজিত টাইগাররা আজ (৫ আগস্ট) সকালে ফিরেছে বিজয়ীর বেশে। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে দুর্দান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ফলে তিন ম্যাচের এ সিরিজে এখন সমতা। এর চেয়ে বড় কথা মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল থেকে টানা পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরাজয়ের পর জয়ের মুখ দেখল বাংলাদেশ।
রোববার সকালে শুরু হওয়া ম্যাচে ২০ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ১৭১ রান। নির্ধারিত ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১৫৯ রানে।
এদিন প্রথমে ব্যাট করে নামা বাংলাদেশ একটু ভিন্ন কৌশল নেয়। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুই বাঁহাতি ওপেনারকে প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নার্স। তাকে এড়াতে এদিন তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামানো হয় লিটন দাশকে। এমনকি স্ট্রাইকও নেন লিটন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নন-স্ট্রাইকে শুরু করেন তামিম।
এ অবস্থায় কৌশল বদলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজও। ডানহাতি লিটনের জন্য বোলিং শুরু করে তারা লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রিকে দিয়ে। তবে নার্স আক্রমণে আসেন দ্বিতীয় ওভারেই এবং আবারও নাড়িয়ে দেন বাংলাদেশকে। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন লিটন দাস। ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ধরে রাখতে তিনে নামানো হয় মুশফিকুর রহিমকে। তিনিও নার্সকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন।
আরেক পাশে তামিম দারুণ খেললেও অন্য পাশে আসেনি তেমন রান। চারে নামা সৌম্য সরকার ষষ্ঠ ওভারে নার্সকে ছক্কা মারেন মাথার ওপর দিয়ে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান আসে কেবল ৩৬। অষ্টম ওভারে সৌম্য যখন বিদায় নেন তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৪৮।
অষ্টম ওভারের মধ্যেই তিন উইকেট হারিয়ে যখন ব্যাকফুটে বাংলাদেশ তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তামিম-সাকিব। তামিম ও সাকিবের ৫০ বলে ৯০ রানের জুটিতেই ১৭১ রানের বিশাল সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ৪৪ বলে ৭৪ করেন তামিম, আর সাকিব করেন ৩৮ বলে ৬০।
জিততে হলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড ১৬১।
সাকিব-তামিমে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ বোলিংয়ের শুরুটাও করে দারুণ। আবু হায়দার রনির নিয়ন্ত্রিত প্রথম ওভারে শুরু। দ্বিতীয় ওভারে মোস্তাফিজ শুরু করেছিলেন টানা তিনটি ওয়াইডে। কিন্তু সেই ওভারেই দলকে এনে দেন হার্ডহিটার এভিন লুইসের উইকেট।
তিনে নামা আন্দ্রে রাসেল শুরুতেই ঝড় তোলেন। তবে চার-ছক্কা হজমের পর দারুণ বাউন্সারে রাসেলকে (১০ বলে ১৭) ফেরান সেই মোস্তাফিজই। মারলন স্যামুয়েলস শুরু করেছিলেন প্রথম দুই বলে চার ও ছয়ে। তৃতীয় বলে একই চেষ্টায় বিদায়। সাকিবের বলে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন দাস। ৫ ওভারে রান ওঠে ৪৮, কিন্তু ততক্ষণে নেই ৩ উইকেট।
৮ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান হয় ৪ উইকেটে ৬০। ক্রিজে তখনো আছেন ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার। পাওয়েলকে নিয়ে তিনি পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন নাজমুল ইসলাম। ৩৮ বলে ৪৩ রান করা ফ্লেচারের ক্যাচ নেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে বল হাতে ফেরান কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে। সীমানায় আরেকট অসাধারণ ক্যাচ নেন লিটন।
এরপরও দুশ্চিন্তা ছিল। কারণ ক্রিজে ছিলেন পাওয়েল। ৩৪ বলে ৪৩ রান করা পাওয়েলকে ১৯তম ওভারে বাউন্সারে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজ। উইকেটের পেছনে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিক।
এদিকে ওই ওভারের শেষ দুই বলে নার্সের চার ও ছক্কায় আবার আশা জাগে ক্যারিবিয়ানদের। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৫। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপু দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। গ্যালারিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশিদের উচ্ছ্বাস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৭১/৫ (লিটন ১, তামিম ৭৪, মুশফিক ৪, সৌম্য ১৪, সাকিব ৬০, মাহমুদউল্লাহ ১৩*, আরিফুল ১*; স্যামুয়েল বদ্রি ০/১৪, নার্স ২/২৫, রাসেল ১/৩৩, পল ২/৩৯, উইলিয়ামস ০/২৯, ব্র্যাথওয়েট ০/২৯)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২০ ওভারে ১৫৯/৯ (ফ্লেচার ৪৩, লুইস ১, রাসেল ১৭, স্যামুয়েলস ১০, রামদিন ৫, পাওয়েল ৪৩, ব্র্যাথওয়েট ১১, নার্স ১৬, পল ২, উইলিয়ামস ০*, বদ্রি ১*; হায়দার ০/২৬, মোস্তাফিজ ৩/৫০, রুবেল ১/৩৫, সাকিব ২/১৯, নাজমুল ৩/২৮)
ফল : বাংলাদেশ ১২ রানে জয়ী
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ : তামিম ইকবাল