জড়িয়ে ধরার চাকরি- শুনতে অবাক ঠেকলেও সত্যি। একাকিত্ব দূর করতেই এমন উদ্যোগ। প্রথমে নিউইয়র্কে শুরু হলেও এখন আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই পরিষেবা।
শুরুতে একাকী মহিলাদের জন্য চালু হলেও পরে তা পুরুষ ও মহিলা দুই ক্ষেত্রেই চালু হয়। সম্পর্কে থাকলেও যারা একা, স্বামী বা স্ত্রী কাজের জন্য বাইরে, কিংবা সম্পর্কে নেই, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই ‘কাডলিং সার্ভিস’ শুরু।
সমাজতাত্ত্বিক, মনোবিদরা বলছেন, আলিঙ্গন মনখারাপ কিংবা একাকিত্ব দূর করার সবচেয়ে বড় ওষুধ।
বছর দু’য়েক আগে এই পরিষেবা প্রথম চালু হয় নিউইয়র্কে। তখন দর ছিল ঘণ্টাপ্রতি প্রায় ৮৫ ডলার। অস্ট্রেলিয়াতে এর খরচও মোটামুটি একই। এই পরিষেবা নেওয়া গ্রাহক বছর একচল্লিশের মহিলা সাসকিয়া ফ্রেডেরিকস বলেন, মাসে মাত্র কয়েক দিন তাঁর স্বামী সঙ্গে থাকেন। একাকিত্ব বোধ করেন। তাই স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
নিউইয়র্কে তিনি, আর স্বামী কানেকটিকাটে দ্য ন্যাশনাল গার্ডের একজন পুলিশ অফিসার। তাই মাসে দু’বার কাডলার সার্ভিসের সাহায্য নিচ্ছেন সাসকিয়া। মজার ব্যাপার হলো, সাসকিয়ার স্বামী বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন। কারণ সংস্থার শর্ত অনুযায়ী, এতে কোনো যৌনতা নেই।
সাসকিয়া বলেন, আলিঙ্গনের কোনো বিকল্প নেই। মাথায় হাত রাখলে কিংবা পাশে কেউ তাঁকে জড়িয়ে ঘুমোতে গেলে আমি নিরাপদ বোধ করি। আমার স্বামী আশাবাদী, তাঁর সহকর্মীরাও বিষয়টিকে খারাপভাবে দেখবেন না।
কাডল সেশনের জন্যই অবসাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানান সাসকিয়া। কারণ এতে তাঁর শরীরও নাকি ‘ফিট’ থাকছে।
এদিকে টাকা দিচ্ছেন বলে এতে গ্রাহকের কোনো অস্বস্তিবোধও নেই বলে জানিয়েছে সংস্থা। তাদের দাবি, আমেরিকার চাকরিজীবী মহিলাদের মধ্যে এর চল বাড়ছে।
নিউইয়র্কের এই সংস্থার সিইও অ্যাডাম বলেন, দু’ঘণ্টার বেশি একদিনে এই পরিষেবা মিলবে না। সপ্তাহে তিন দিনের জন্য এটি চালু করা হচ্ছে।
এদিকে মহিলা ছাড়াও পুরুষ এমনকি তরুণ ও বৃদ্ধরাও আসছে এই কাডলিং সার্ভিস নিতে! পরিণত মনের মানুষরা এই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাই কাডলিংয়ের ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্কের ইচ্ছা আসাটা স্বাভাবিক হলেও পেশাদারিত্বের কারণেই তা অন্য ভাবে দেখছেন কর্মীরা।
অ্যাডাম বলেন, একই মানসিকতার মানুষের ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনও জরুরি, সে কথা মাথায় রেখেই এই পরিষেবার ভাবনা। আমেরিকার অন্য শহরেও এই পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা ছিল সংস্থার। স্পেনের সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে আমেরিকার ১৯টি শহরে রয়েছে এই পরিষেবা।
পেশাদার কাডলার ইয়ান বলেন, এই পরিষেবা মনকে ভারমুক্ত করছে। নিজেকে মানুষ হিসাবে মেলে ধরার জন্যই এই পরিষেবা নিচ্ছেন আরো অনেকেই।