চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি বলেছেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ২৫০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য। যা আমাদের খাল-নালাগুলোতে গিয়ে পড়ে। বর্ষা এলেই তার প্রতিফলন দেখা যায়। পরিবেশ দূষণ রোধে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার অবশ্যই বর্জন করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ংকর। জরিপ বলছে, গত এক বছরে বঙ্গোপসাগরে ২৬ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আগামী ১ জুলাই থেকে প্লাস্টিকমুক্ত শহর গড়তে কাজ শুরু করবে। আমরা তার জন্য বসে না থেকে আজ থেকেই নিজেরা সচেতন হই।
আজ ৫ জুন সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়নে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ, প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে, সামিল হই সকলে’।
অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। সভা শেষে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের শুভ উদ্বোধন ও পরিবেশ মেলার স্টল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ আমিনুর রহমান এনডিসি।
আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, চট্টগ্রামের সবুজ অরণ্য হারিয়ে গেছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়া কিংবা শীতকালে শীত অনুভূত না হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ। সুতরাং পরিবেশ দূষণ রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে জলবায়ু হুমকির মুখে পড়তে হবে আমাদের। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে এসেছি, আগামী ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে যাবো। এজন্য পরিবেশ দূষণ রোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। বাল্য বিবাহ, ধূমপান ও মাদক রোধসহ মিথ্য ও মুখস্ত বিদ্যা পরিহারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে, সিনিয়র কেমিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস ও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালনক আফজারুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ, রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মাহফুজুর রহমান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরীন। পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, পরিবেশ দূষণরোধে পলিথিনসহ প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ জরুরি। এতে অন্ততঃ প্লাস্টিকের বহুমাত্রিক ব্যবহার কমে আসবে। একইসঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, দেশে ১২ লাখ মানুষ সরাসরি প্লাস্টিক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার কোম্পানি প্লাস্টিক উৎপাদন করছে। যার প্রতিফলন আমাদের পরিবেশে দেখা যাচ্ছে। সারাদেশে প্রতিদিন তিন হাজার টন প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পানীয় সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে। এসবের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। তাছাড়া প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির ওপর সরকার অতিরিক্ত কর আরোপ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে মাত্র ২০ টাকার জিনিস কেনার জন্য পলিথিন দেওয়া হয়। কিন্তু তারা জানে না- এ পলিথিন কতটুকু ক্ষতিকারক। ব্যবহারের পর প্লাস্টিক ও পলিথিনের বর্জ্য নদী, সাগর এবং জলাশয়ে ফেলার কারণে মাছসহ জলজ প্রাণি খাবার মনে করে এসব খেয়ে নিচ্ছে। এসব জলজ প্রাণি বিশেষ করে মাছ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া হলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের শহরগুলো ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্লস্টিকের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে এর ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেকে দেশ প্লাস্টক ব্যবহার কমিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বাজারসহ দৈনিক কাজে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করছে। এসময় তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিনিয়োগে জোর দেন।
জেএন/এমআর