রাত পোহালেই বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে পৌর বাসীর মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও রয়েছে ব্যাপক আতংক। মেয়র পদে কে নিরাপদ, কে অনিরাপদ, ব্যক্তিগত আক্রমন ও নানা তর্কবিতর্কের মধ্যদিয়ে গতকাল (১০ জুন) রাত ১২ টায় শেষ হয়েছে সকল ধরনের প্রচারণা। অপেক্ষার পালা শেষ হলেও পৌরবাসী কেমন মেয়র চান তার প্রতিফলন ঘটবে আগামীকাল ১২ জুন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই বিজয়ী হবেন বলে দাবী করেছেন তারা। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পৌর শহরে নিরাপত্তা মহড়া শুরু হয়েছে গতকাল থেকেই।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম সাহাদাত হোসেন জানান, একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে কোন প্রার্থী তাদের ক্ষমতা দেখাতে পারবে না। ভোটারদের ভয় পাবার মতো কিছুই নেই। ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোট প্রদান করতে পারবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড় প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ৮ শতাধীক পুলিশ, র্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যের সমন্বিত বাহিনী নির্বাচনের নিরাপত্তায় কাজ করবেন। ১২ জুন সকাল ৮ থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। শেষ হবে বিকেল ৪টায়। শনিবার রাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
নির্বাচনের প্রচরানায় নামার প্রথম দিন থেকেই কাঁদা ছুড়াছুঁড়িতে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন নৌকার প্রার্থী আর নৌকার বিদ্রোহীপ্রার্থী।
এদিকে নির্বাচনে মেয়র পদে কেমন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে পৌর পিতার আসনে বসাতে চান পৌরবাসী তা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ভোট প্রার্থনার পলিসির মাধ্যমে পাল্টে গেছে ভোটের মাঠের সমীকরণ। সৃষ্টি হয়েছে নৌকার পক্ষের গণজোয়ার। মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন মাহবুবুর রহমান। সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। ব্যালেটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নৌকার বিজয় নিশ্চিত। এমনটাই দাবি করছেন নৌকার পক্ষের সমর্থকেরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকের মাসেদুল হক রাশেদও থেমে নেই। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আটঘাট বেঁধে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। হকশনের পুত্র বঁধু থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনরাও অংশ নিয়েছেন প্রচারনায়। নারিকেল গাছ প্রতীকের সমর্থকেরা বলছেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নারীকেল গাছ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত। যেখানে মাসেদুল হক যাচ্ছেন সেখানেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান নারিকেল গাছের সমর্থকরা।
আওয়ামীলীগ মনোনিত মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, আমাকে একবার সুযোগ দেন, শাসক নয় জনগনের খাদেম হয়ে কাজ করবো এবং একটি নিরাপদ শহর উপহার দেবো
তিনি জানান, পৌর বাসীর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। জনগন আমাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি পৌরবাসী ভুল করবেনা। তাঁরা ১২ জুন নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন। আমি জনগনের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবো। জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেবো নাগরিক সেবা। সন্ত্রাসী, দখলবাজ, ও মাদকের বিরুদ্ধে সুন্দর পর্যটন নগরী গড়তে মানুষ আমাকেই বেছে নেবেন।
মেয়রপ্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ জানান, নারিকেল গাছের গণজোয়ার দেখে বিদ্রোহী প্রার্থীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এজন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে এবং তাঁর কর্মীদের ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘ যেদিকে যাচ্ছি সেদিকে নারিকেল গাছের জয়ের ধ্বনি। তিনি নির্বাচিত হলে একটি মডেল পৌরসভা জনগনকে উপহার দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।’
পুলিশ সুপার মো মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো রকমের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে। ভোটারের বাইরে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ নেই।
এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত আছে পর্যাপ্ত পরিমাণের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার ৯৪ হাজার ৮০২ জন। পৌর মেয়র ও ১২ জন কাউন্সিলর নির্বাচত করবেন। তৎমধ্যে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুইজন আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাসেদ।
জেএন/শামীম/এমআর