একদিনেই পড়ল ১৬ উইকেট! মিরপুরে বোলারদের আধিপত্যের দিনে শেষ বিকেলে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন শান্ত-জাকিররা। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়ে দুজনই ব্যক্তিগত পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন। শান্ত-জাকিরের ব্যাটে চড়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান। আর লিড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭০ রানে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনে ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান করেছিল লিটনের দল। তবে দ্বিতীয় দিনে আজ প্রথম সেশনের মাত্র ৭ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে মাত্র ২০ রান যোগ করতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান শুরু থেকেই ধুঁকছিল। টাইগার বোলারদের তোপে প্রথম ইনিংসে তারা সংগ্রহ করেছে মোটে ১৪৬ রান।
সফরকারীদের ফলোঅনে না পাঠিয়ে ফের ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারটি করছিলেন আফগান বোলার নিজাত মাসুদ। পাঁচ বলে ৩টি চারসহ ১৩ রান দেওয়ার পর ডান হাতের আঙুলের সমস্যায় বেরিয়ে যান তিনি। ওভারের শেষ বলটি করতে আসেন আমির হামজা হোতাক। তার বলেই কাটা পড়েন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি শরীরের অনেক দূর থেকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিলেন টাইগার এ ওপেনার। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে কিপারের পা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো ইব্রাহিম জাদরানের হাতে! ৪ চারে ১৩ বলে ১৭ রান করেন জয়। জয়ের বিদায়ের পর বোলারদের ওপর চড়াও হন টাইগার দুই ব্যাটার শান্ত ও জাকির। দুজনই ব্যক্তিগত ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিল সফরকারীরা। আফগানিস্তানের ইনিংসের ২য় ওভারের শেষ বলেই উইকেটের দেখা পেতে পারতো বাংলাদেশ। তবে লিটনের ভুলে তা হয়নি। শরিফুলের লেন্থ বল ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্রথম স্লিপের দিকে যাচ্ছিল, সেখানে গ্লাভস হাতে লিটন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের নাগাল পাননি, আর প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তকে চেষ্টা করারও সুযোগ দেননি। ফলে অপেক্ষা বাড়ে বাংলাদেশের।
তবে সেটা খুব বেশি দীর্ঘায়িত হতে দেননি শরিফুল। এই বাঁহাতি পেসারের করা ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের ওপর ফুল লেন্থে ছিল, সেখানে ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন ইব্রাহিম। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ বলে ৬ রান।
ইব্রাহিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার আব্দুল মালিক। এবাদতের করা ইনিংসের ৭তম ওভারের ৫ম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থে ছিল, সঙ্গে খানিকটা বাড়তি বাউন্স ছিল তাতেই পরাস্ত এই ওপেনার। ১৭ রান করা এই ব্যাটার তৃতীয় স্লিপে জাকির হাসানের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন।
নতুন বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এবাদত ইনিংসের ১২তম ওভারে আরও একবার আঘাত হানেন আফগান শিবিরে। চতুর্থ বলটি শর্ট লেন্থে করেছিলেন সেখানে বলের লাইন-লেন্থ কিছুই বিচার করতে পারেননি রহমত শাহ। চোখ বুঝে পুল করতে গিয়ে ভুল করেন এই ব্যাটার। বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে ওপরে ওঠে গেলে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ নেন তাসকিন।
লাঞ্চ থেকে ফিরেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি আফগানরা। দলীয় ৫১ রানের মাথায় অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদীকে ফিরিয়ে দেন শরীফুল। এরপর অবশ্য ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার আভাস দিচ্ছিলেন নাসির জামাল-আফসার জাজাইয়ের পঞ্চম জুটি। তবে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে মিরাজের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে নাসির জামাল। মিরাজের পরের ওভারেই তাসকিনের বদলে এবাদতকে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক লিটন। আর তাতেই সাফল্য। এবাদতের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শরীফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪০ বলে ৩৬ রান করা আফসার।
এরপর কেবল শেষের অপেক্ষা। দ্রত ফিরে যান ইয়ামিন আহমেদজাঈ এবং আমির হামযা। ৮ উইকেট হারিয়ে আফগানদের দলীয় রান তখন ১২৮। ফলোঅনের সংখ্যা তখন উঁকি দিচ্ছিল জোরেশোরেই। তবে করিম জানাত লড়ে যাচ্ছিলেন। তার সেই আশা জলাঞ্জলি দেন নিজাত মাসুদ। এরপর শেষ রক্ষা হয়নি আফগান ব্যাটার জানাতেরও, ফিরে যান ব্যক্তিগত ২৩ রানে মিরাজের শিকার হয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৯ ওভারে ১৪৬ (ইব্রাহিম ৬, মালিক ১৭, রহমত ৯, শাহিদী ৯, জামাল ৩৫, জাজাই ৩৬, জানাত ২৩, হামজা ৬, আহমাদজাঈ ০, মাসুদ ০, জাহির ০*; তাসকিন ৭-০-৪৮-০, শরিফুল ৮-২-২৮-২, এবাদত ১০-১-৪৭-৪, তাইজুল ৫-০-৭-২, মিরাজ ৯-১-১৫-২)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৩ ওভারে ১৩৪/১ (জয় ১৭, জাকির ৫৪*, শান্ত ৫৪*; আহমেদজাঈ ৫-০-৩৪-০, মাসুদ ৩.৫-০-৩০-০, হামজা ৬.১-০-২৭-১, জানাত ৪-০-২৪-০, জহির ৪-০-১৯-০)
জেএন/এমআর