মিরপুরের আকাশে শেষ বিকেলে মেঘের ঘনঘটা। মাঠে আলোকস্বল্পতায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফ্লাডলাইট। কৃত্রিম আলোর নিচে পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় যেন চোখে অন্ধকারই দেখছিল সফরকারী আফগানরা। ৬৬২ রানের টার্গেট তাড়ায় ইনিংসের ২ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়া। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় দিন শেষে আফগানদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৫ রান।
ঢাকা টেস্ট জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন আর ৮ উইকেট। অন্যদিকে, মিরাকল কিছু ঘটাতে আফগানদের লাগবে আরও ৬১৭ রান।
অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায় সফরকারীরা। শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। ফুল লেংথের ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারেননি। বল গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। জোরাল আবেদনে সাড়া দিতে দেরি করলেন না আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।
শরিফুলের পরের ওভারেই সাফল্য পেয়েছেন আগের ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকা তাসকিন। টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরে বলে কভার ড্রাইভের চেষ্টা করেন মালিক। বল ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। ইব্রাহিমের গোল্ডেন ডাকের পর মাত্র ৫ রান করে ফেরেন মালিক। প্রথম ২ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগানরা।
বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার আগেই বড় ধাক্কা আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদীর রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়া। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের খেলা চলছিল তখন। বোলিংয়ে ছিলেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। তার করা ওভারের তৃতীয় বলে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি। আফগানদের হয়ে সে সময় ব্যাট করছিলেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি।
তাসকিনের করা সেই বলটি এই ব্যাটার ভেবেছিলেন বাউন্সার হবে। যে কারণে বল আসার আগেই বসে পড়েন তিনি। কিন্তু সেই ডেলিভারি খুব বেশি ওপরে উঠেনি। এই সময়ে সরাসরি গিয়ে আঘাত করে শহীদির হেলমেটে। অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছিল বেশ ভালো আঘাতই পেয়েছেন আফগান এই ক্রিকেটার। এরপর মাঠে তাকে সেবা শুশ্রুষার পরও ঠিক হয়নি তার সমস্যা। যে কারণে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে শহীদি উঠে গেছেন ব্যক্তিগত ১৩ রান করে।
এরপর যদিও আর কোনো বিপর্যয় হয়নি। আলোকস্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে গেছে তৃতীয় দিনের খেলা। অপরাজিত আছেন দুই ব্যাটার রহমত শাহ (১০) ও নাসির জামাল (৫)।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এদিন ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ২৯১ রান যোগ করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় স্বাগতিকরা।
দুই বছর পর সেঞ্চুরিখরা ঘুচিয়েছেন মুমিনুল। ছবি ক্রিকইনফোর
মুমিনুলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে একই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের অনবদ্য ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১২৪ রান। দুই ইনিংস মিলে তার সংগ্রহ ২৭০ রান৷
শান্তর পর তিন অঙ্কের দেখা পান মুমিনুল হক। দুই বছরের অপেক্ষার পর ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১২১ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এছাড়া লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৬৬ রান৷
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৮০ ওভারে ৪২৫/৪ (ডিক্লে.) (জয় ১৭, জাকির ৭১, শান্ত ১২৪, মুমিনুল ১২১*, মুশফিক ৮, লিটন ৬৬*; আহমাদজাই ১৩-১-৬১-০, মাসুদ ১২.৫-০-৮৩-০, হামজা ১৬.১-০-৯০-১, জানাত ৮-০-৪৮-০, জাহির ২৩-০-১১২-২, শহিদী ৩-০-১৯-০, জামাল ২-০-৪-০, রহমত ২-০-৪-০)
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ১১ ওভারে ৪৫/২ (জাদরান ০, মালিক ৫, রহমত ১০*, শহিদী ১৩ রিটায়ার্ড হার্ট, জামাল ৫*; শরিফুল ৪-১-৬-১, তাসকিন ৪-০-২৮-১, তাইজুল ২-০-৬-০, মিরাজ ১-০-১-০)
জেএন/এমআর