সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে সম্মানজনক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছেন সাত বাংলাদেশি তরুণ।
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডে মনোনীতরা হলেন- এসএম মবিন সিকদার, আহনাফ আবরার হোসাইন, আবদুল্লাহ হাসান দিপ্ত, ঋতুরাজ ভৌমিক, জ্যোতিরময়ী দাস নোভা, এফএম ফারহান ফায়াজ, এস কে সোইয়েবুর রহমান ও জহির রায়হান।
এসএম মবিন সিকদার : অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া এসএম মবিন সিকদার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশে অনলাইন বিজ্ঞান শিক্ষা জনপ্রিয়করণে একজন পথপ্রদর্শক। ২০১৮ সালে তিনি ‘সায়েন্স বী’ প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি বর্তমানে বাংলাভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানভিত্তিক অনলাইন এডুকেশন প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীর জন্য কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করা ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরও বেশি সহজলভ্য করার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান ওয়েবসাইট সৃষ্টি করেছেন যেখানে প্রায় ২ লক্ষাধিক রেজিস্টার্ড সদস্য এবং দৈনিক ৪০ হাজারের বেশি সক্রিয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি সায়েন্স বী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখায় অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
আহনাফ আবরার হোসাইন : আহনাফ আবরার হোসাইন এবং তার বন্ধুরা মিলে বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্যার্থে ‘ভরসাস্থল’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তারা ১০টি জেলাজুড়ে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে খাবার, নলকূপ, ভ্যান এবং সেলাই মেশিন দিয়ে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে কোভিডকালীন, বন্যা এবং শীতের সময় অনুদান সংগ্রহ ও সাহায্য করে সামাজিকভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
আহনাফ তার প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদি এবং বিস্তৃত করতে ছাত্রদের অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে ‘ডিআরএমসি সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করে।
আবদুল্লাহ হাসান দিপ্ত : একজন সমাজকর্মী, যুব প্রশিক্ষক এবং মানবাধিকার আইনজীবী। যিনি বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও সমর্থনের কাজ করছেন। এ ছাড়াও তিনি ‘পাঠচলা ফাউন্ডেশন’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়া।
করোনাকালীন তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা এবং সংখ্যালঘু যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ৩ হাজার ৫০০ মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেন।
ঋতুরাজ ভৌমিক : ঋতুরাজ ভৌমিক ‘বাপ কা বেটা’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১০ বছর বয়সী ঋতুরাজ বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্যার্থে কাজ করে। সে এ যাবৎ ২ হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করেছে এবং তাদের সাহায্যার্থে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। ঋতুরাজ দুটি বইও লিখেছে এবং বই থেকে সব উপার্জিত অর্থ শিশুদের শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছে।
জ্যোতিরময়ী দাস নোভা : জ্যোতিরময়ী ২০১৭ সালে ‘WISE’ (We in Science and Engineering) প্রতিষ্ঠা করে গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষায় ভূমিকা পালন করেন। আর এই সুবিধা পৌঁছে দিতে তিনি প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সহায়তা ও শিশুদের সৃজনশীল বিকাশেও কাজ করেন।
এফএম ফারহান ফায়াজ : এফএম ফারহান ফাইয়াজ ‘পরিকল্পনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এর মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালান। এ ছাড়াও তিনি ‘প্রজেক্ট হাশিমুখ’ এবং ‘আম্ফান রিলিফ প্রজেক্ট’-এর মতো প্রচারের মাধ্যমে ১৪ হাজার ইউএস ডলার ফান্ড এবং ২০ হাজার মানুষকে খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করেন।
এস কে সোয়েবুর রহমান : এস কে সোয়েবুর রহমান ‘এজিএসএস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে কৃষিকে স্মার্ট, উদ্ভাবনী এবং টেকসই করতে কাজ করছেন। কৃষি খাতে ৪০ জন যুবকের একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
জহির রায়হান : জহির রায়হান একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং জেন্ডার অ্যাডভোকেট। যিনি ‘ইয়ুথ ফর চেঞ্জ বাংলাদেশ’র সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি জেন্ডার সমতার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধেও কাজ করেন।
এ বছর সব মিলিয়ে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন বিভিন্ন দেশের ১৮৯ জন তরুণ। শুক্রবার (৩০ জুন) প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে মনোনীতদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রিন্সেস ডায়ানার নামে তার দুই ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়াম ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষে এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেন। পুরস্কারটিকে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জেএন/এমআর