ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান যাই হোক, জোটের মাঠে তারা একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নন! ব্যালটে সিল যতটাই পড়ুক আসন তারা দাবি করছেন অর্ধশত থেকে দেড়শ’!
সমস্যা হলো জোটের বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে প্রধান শরিকেরা তাদের ‘আবদারকে’ সরাসরি নাকচও করতে পারছেন না।
বড় দলগুলোকে তাই শরিকদের আসন ছাড়তেই হচ্ছে। মনোনয়নের যোগ-বিয়োগে কৌতুহল এখন একটাই, কত ‘কমে’ কাকে রাজি করানো যায়!
জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগের কাছে ১০০টি আসন চেয়েছে দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে ‘সম্মানজনক’ যেকোনো সংখ্যায় আপত্তি নেই তাদের। অন্তত দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাষ্য এমনটাই।
সোমবার সংবাদমাধ্যমকে জি এম কাদের বলেন, শরিকদের ৭০ আসন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে আমরা চেয়েছি ১০০টি আসন। এখন পারষ্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ‘একটি সম্মানজনক সংখ্যার’ আসন যদি তারা ছাড়তে রাজি হয়, তাহলে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচনে যাব।
এক্ষেত্রে লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপি (মঞ্জু), তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ ও গণআজাদী লীগ
জাতীয় সংসদে বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জন, জাসদ (দুই অংশ মিলে) ৬ জন, তরিকত ফেডারেশনের ২ জন এবং জাতীয় পার্টি-জেপির ২ জন সাংসদ প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই সাংসদদের সঙ্গে আরো অন্তত একশটি আসনে প্রার্থী দিতে চায় ১৪ দলের শরিকরা।
এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের দুই অংশ মিলে (জাসদ-ইনু ও জাসদ-আম্বিয়া) ৩০টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৫টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৫টি, তরিকত ফেডারেশন ১০টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, গণআজাদী লীগ ও সাম্যবাদী দলসহ জোটের শরিক অন্য দলগুলো আরো অন্তত ২০টি আসনে প্রার্থী দিতে চাইবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদল জয়নিউজকে বলেন, কয়টি আসন চাইতে পারি বা কয়টি আসন পাবো এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমরা ১৪ দলের কাছে আমাদের আকাঙ্খার কথা জানিয়েছি। নেত্রী বলেছেন, ১৪ দল যা চায় তা দিতে তার আপত্তি নেই। কিন্তু আপনারা এমন প্রার্থী দেবেন যারা বিজয়ী হয়ে আসতে পারে। তাই আমরা আমাদের প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছি, তাদের মধ্যে কারা প্রার্থী হচ্ছেন সেটা ১৪ দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেই আপনাদের জানাতে পারব।
গণফোরাম, জেএসডি, এলডিপি, নাগরিক ঐক্য, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জামায়াত
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জোটের প্রধান দল বিএনপির কাছে ৫০ থেকে ৭০টি আসন চাইতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি তাদের ৩০টি আসনে ছাড় দিলেই তারা ‘খুশিমনে‘ নির্বাচনে যাবে।
এছাড়া এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের আসনটিসহ ১৫টি, হাটহাজারীতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের আসনটিসহ ১০টি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্তত দেড়শটি আসন চাওয়া হতে পারে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এর বাইরে সদ্য নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া জামায়াতের পক্ষ থেকেও ৫০টির মতো আসন চাওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলা থেকেই কমপক্ষে চারটি আসন চাওয়া হবে বলে জামায়াত নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
এদিকে জোটের অনেক দলই ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে উল্লেখ করে সোমবার বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা সংবাদমাধ্যমকে জানান, শরিকদের প্রার্থী তালিকার ভিত্তিতে কোন দলকে কত আসন ছাড়া হবে তা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।