চট্টগ্রাম ও রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার রাজধানীতে ৬০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন দুজন। পরিস্থিতি সামনে আরও খারাপ হতে পারে বলে শঙ্কার কথাও জানিয়েছে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে আজ রোববার খুলছে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
রাজধানীর কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করতে অভিভাবকদের মোবাইলে সচেতনতামূলক কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্কুলে প্রতিটি ক্লাস রুম, খেলার মাঠ, খোলা জায়গাসহ যেখানে পানি জমে ছিল সব পরিষ্কার করে স্প্রে করা হয়েছে। বর্ষা চলাকালে প্রতিদিন স্কুলের আঙিনা পরিষ্কার রাখাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা শার্ট, জামা পরিধান এবং মোজাসহ জুতা পরে আসার জন্য বলা হয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রী মারা গেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে তারা সচেতন আছেন।
এদিকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদারকি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক স্তরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এই দুটি তদারকি প্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আলাদাভাবে তাগিদ দিয়েছে এবং তা সরাসরি দেখতে ভিজিলিং টিম গঠন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচ দফা নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ মনিটরিং করা হবে। কোথাও অপরিষ্কার পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক উত্তম কুমার বলেন, স্কুল খোলার পর কি কি করতে হবে তার নির্দেশনা ঈদের আগেই দেওয়া হয়েছে। স্কুল এসব নির্দেশনা মানছে কি না তা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকি করতে বলা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নির্দেশনা না মানার অভিযোগ বা প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, রোববার থেকে স্কুল খুলছে। ইতোমধ্যে সব ক্লাস রুম, ফাঁকা জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। মাঠে জমে থাকা পানি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করে স্প্রে করা হয়েছে। প্রতিদিন স্কুল বন্ধ ও খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে বলে জানান তিনি।
স্কুল-কলেজে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
মশার বংশবিস্তার রোধে প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলা, ফুলের টবগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা ও যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায়। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো–
১. খেলার মাঠ ও ভবন নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
২. মাঠ বা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা হয়েছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
৪. এডিস মশার প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে
৫. সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় নিয়ে প্রত্যহ শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে
আদেশে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বহু মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন ও হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবনগুলোর মাঝে পানি জমে থাকে এমন জায়গা, ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজনন কেন্দ্র। তাই ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির পর খোলার পর এসব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
প্রাথমিক স্কুলে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
ঈদের আগে গত ২৫ জুন এক নির্দেশনা জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে দেশের সব প্রাথমিক স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঈদুল আজহার ছুটির আগে ও পরে খোলার সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ঈদুল আজহার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে ঈদুল আজহার ছুটি-পরবর্তী অফিস/বিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করতে হবে। যাতে করে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন না ঘটে। এসব বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
জেএন/এমআর