বে-টার্মিনাল: ৫শ একর জমির মূল্য পুনঃনির্ধারণ

আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে চলা ভূমি জটিলতার মধ্যে ৫০০ একর খাস জমির মূল্য পুনঃনির্ধারণ করেছে জেলা প্রশাসন। নতুন হিসেব অনুযায়ী এই জমির জন্য ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে নতুন প্রস্তাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই ৫০০ একরের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ ও কাট্টলী সার্কেলের জায়গা। খাস জমি নামমাত্র মূল্যে পাওয়া গেলে চট্টগ্রাম বন্দরের অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

- Advertisement -

সংস্থাটি বলছে, নতুন প্রস্তাবের ফলে দীর্ঘদিনের ভূমি জটিলতা সহসাই নিরসন হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়া যাবে ভূমি। আশা করা হচ্ছে, জেলা প্রশাসন নতুন করে যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তার চেয়েও কম দামে অর্থাৎ নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে ভূমি পাওয়া যাবে। জমি পাওয়া গেলে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ টার্মিনালের।

- Advertisement -google news follower

বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র উপকূলে প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিতে বে-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ৮৭০ একর ভূমি সমুদ্র উপকূল থেকে পাওয়া যাবে। বাকিটা সমুদ্র থেকে রিক্লেইম (পুনরুদ্ধার) করার কথা।

২০২১ সালে ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি বন্দরকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ ভূমির অধিগ্রহণ মূল্য ছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এরপর থেকে বন্দর বাকি ৮০৩ একর সরকারি খাস জমি প্রতীকী মূল্যে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। ২০২১ সালের জুন মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।

- Advertisement -islamibank

কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি বাবদ প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরের পক্ষ থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে এতো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য বন্দরের নেই বলে জানানো হয়। এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতীকী মূল্যে খাস জমি বন্দোবস্তের চেষ্টা চালিয়ে যায় বন্দর।

এদিকে ৮০৩ একর ভূমির মধ্যে কিছু জমি বন বিভাগের অধীনে ছিল বলে তাতে আপত্তি দেয় বন বিভাগ। আর কিছু জমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওঠে। জটিলতা কাটাতে জেলা প্রশাসন তিন শ্রেণির জমিকে আলাদা করে বন্দোবস্ত দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় গত মাসের শুরুর দিকে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ৫০০ একর নিষ্কণ্টক খাস জমির জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। বন বিভাগের ২৮৭ একর জমির জটিলতা নিরসন করতে পাঠানো হয় আরও একটি প্রস্তাব।

এর আগে জেলা প্রশাসন প্রথম দফায় ৮০৩ একরের অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে বন্দর থেকে বন্দোবস্তের কথা বলা হলে মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ বন্দরের পক্ষ থেকে জমির শ্রেণি নির্ধারণ করে বন্দোবস্ত দিতে বললে সে অনুযায়ী ৫০০ একরের বন্দোবস্ত মূল্য কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল হবে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়েও বড়। চট্টগ্রাম বন্দর বছরে যে পরিমাণ পণ্য হ্যান্ডলিং করতে পারে, শুধু বে-টার্মিানালেই হ্যান্ডলিং করা যাবে তার কয়েকগুণ বেশি। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় তিনটি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি নির্মাণ ও পরিচালনা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। এরইমধ্যে দুটি টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM