পর্যটনবান্ধব একজন জেলা প্রশাসকের গল্প

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ চট্টগ্রামে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই চট্টগ্রামের মানুষ তার বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডের স্বাক্ষী হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের সুস্থ বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন যা সকল বিবেচনায় অনন্য।

- Advertisement -

অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের স্বর্গরাজ্য থেকে ১৯৯ একর সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরী করেছেন। এলাকার জনসাধারন এবং সংবাদমাধ্যমের লোকজন ভালোবেসে সে পার্কের নাম দিয়েছে ডিসি পার্ক। জেলা প্রশাসন পার্কটিতে এরই মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো বাহারি রঙবেরঙের দেশি-বিদেশি ফুল নিয়ে ১০ দিন ব্যাপী ফুল উৎসব করা হয়েছে। বিটিআরসির তথ্য মতে, ১০ দিন ব্যাপী ঐ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিলো।

- Advertisement -google news follower

পর্যটকদের জন্য নিউমার্কেট থেকে পতেঙা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত পর্যটক বাস এবং সর্বশেষ সংযোজন ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস। চট্টগ্রামে যোগদান করে তিনি চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের সুযোগের অভাবের বিষয়টি অনুধাবন করে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষনীয় স্পট হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এ সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত সরাসরি কোন বাস সার্ভিস ছিল না। অধিকাংশ পর্যটক সিএনজি/অটোরিকশা ভাড়া করে যেতেন। এতে করে সমুদ্র সৈকতগামী পর্যটকদের ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক ভাড়া গুণতে হতো।

জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান চট্টগ্রামের পর্যটনপ্রেমী মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্য়ায়ে নিবিড় যোগাযোগ করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের সহায়তায় পতেঙ্গাগামী পর্যটকদের জন্য জন্য দুইটি ডাবল ডেকার বাসের ব্যবস্থা করেন। বাস দুইটি গত ১০ জুন থেকে টাইগার পাস-ডিসি পার্ক (ফৌজদারহাট)- পতেঙ্গারুটে চলাচল শুরু করে। ডাবল ডেকার বাস দুটির মধ্যে একটি ছাদখোলা, যেখানে বসে কিংবা দাড়িয়ে পর্যকটরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতগামী পর্যটকগণ বায়েজিদ লিংক রোড়ের দুই পাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফৌজদারহাট মেরিন ড্রাইভের মনমাতানো সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সৈকতে পৌছতে পারেন। বাস দুটির ২ টি ট্রিপ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে নিউমার্কেট ছেড়ে যায় এবং ২ টি ট্রিপ আবার নিউমার্কেট ফিরে আসে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ট্রিপের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি থাকে। শুক্রবার মোট ৩ টি ট্রিপ নিউমার্কেট ছেড়ে যায় এবং আবার ৩টি ট্রিপ ফিরে আসে। শনিবার সকাল ও বিকেল মিলিয়ে মোট ৪ টি ট্রিপ শহর ছেড়ে যায় এবং ৪ টি ট্রিপ ফেরত আসে।পর্যটন বাসে সকল আয়ের মানুষের সামর্থ্য বিবেচনা করে বিআরটিসি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ও কম ভাড়া রাখা হয়েছে। টাইগার পাস হতে ডিসি পার্ক পর্যন্ত ৪০ টাকা, ডিসি পার্ক হতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৩০ টাকা, টাইগার পাস হতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

- Advertisement -islamibank

পর্যটক বাস চালু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ছাদখোলা ডাবল ডেকার বাসের ধারণক্ষমতা ৫৫ জন এবং অপর বাসটির ধারণক্ষমতা ৭৪ জন হিসাবে প্রতিদিন ২৫৮ জন যাত্রী চলাচল করতে পারে। বাস দুইটি চালু হওয়ার কয়েকদিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন ধারণক্ষমতার বেশি সংখ্যক যাত্রী চলাচল শুরু করে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়। যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিকালে আরো দুইটি করে বাস বাড়ানো হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিকালে যাত্রী সংখ্যা ধারণক্ষমতার বেশি থাকলেও সকালে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম থাকে। সকালে যাত্রী কম থাকলেও পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনা করে সকালের বাস সার্ভিসও চালু রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকে ০৮ জুলাই পর্যন্ত ২৭ দিনে মোট ৭৩৯৫ জন পর্যটক বাস দুইটি ব্যবহার করে চলাচল করেছে অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২৭৪ জন পর্যটক চলাচল করেছে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে পর্যটক বৃদ্ধি এবং তাদের সুবিধার বিষয় বিবেচনা করে ঈদের পরের ২ দিনের জন্য নিউমার্কেট রুটের পাশাপাশি চকবাজার ও বহদ্দারহাট রুটে ২ টি করে ৪ টি বাস সংযোজন করা হয়। পর্যটক বাসের চাহিদা বাড়ায় আগামী কিছু দিনের মধ্যে আরো কয়েকটি বাস সংযোজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গত ১ জুলাই থেকে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার উন্নত বিশ্বের আদলে চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশে জেলা প্রশাসক আরো একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে চালু করেন ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস।এই ট্যুর সার্ভিসের মাধ্যেমে প্রাথমিকভাবে পর্যটকগণ সীতাকুন্ড ইকোপার্ক (সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা), গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত , মহামায়া লেক এবং ডিসি পার্কে ভ্রমণ করছেন।ফুল ডে ট্যুর সার্ভিসের মাইক্রো-বাসগুলো চট্টগ্রামের শহরের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটে অবস্থিত মোটেল সৈকত এর সামনে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সকাল ৮ঃ৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে এবং সন্ধ্যা ৬.৩০ টার মধ্যে মোটেল সৈকতের সামনে ফিরে আসে। মাত্র ৮৫০ টাকার প্যাকেজটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাস সার্ভিসের পাশাপাশি সকালের স্ন্যাকস , দুপুরের খাবার ,সার্বক্ষণিক ট্যুর গাইডের সুবিধা আছে। পর্যটক বাসের মতো ফুল ডে ট্যুর সার্ভিসও চট্টগ্রামের ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।চট্টগ্রামের আপামরজনসাধারণ ফুল ডে ট্যুর সার্ভিস নিয়ে উচ্ছ্বসিত।গত ০১ জুলাই হতে চালু হওয়া ডে ট্যুরের প্রথম দিনেই ৪ টি মাইক্রোবাসে ৪০ জন পর্যটক ভ্রমন করেছেন। সর্বশেষ ০৮ জুলাই পর্যন্ত ০৩ দিনে ১৩ টি মাইক্রোবাস ট্রিপে ১২৯ জন পর্যটক ডে ট্যুর সার্ভিস গ্রহন করেছেন। পর্যটকরা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নেয়া এই উদ্দ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

অচিরেই রাঙ্গুনিয়া, বাশখালী , আনোয়ারা ও ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে এ ধরনের ফুল ডে ট্যুর চালু করা হবে বলে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনমূলে চট্টগ্রামের পতেংগা ও পারকীসহ জেলার সকল সমুদ্র সৈকতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং অনান্য পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সমন্বয়ের নিমিত্ত “বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি”র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন এলাকার উন্নয়নে বিশদ পরিকল্পনা প্রনয়ন এবং তার বাস্তবায়নে সরকারী-বেসরকারী অংশীজনদের নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘিরে যত্রতত্র বিদ্যমান বিভিন্ন অস্থায়ী অবকাঠামো সমূহকে আকর্ষনীয় ও জনবান্ধব করে তোলার জন্য বীচ এলাকায় ফুড জোন, কিডস জোন, পাবলিক টয়লেটসহ বিভিন্ন জোনিং এ ভাগ করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে চলমান পর্যটন বান্ধব উদ্যেগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সবচেয়ে পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলা। পাহাড়, নদী ও সাগরের মেলবন্ধন সমৃদ্ধ এ জেলায় সঠিক পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন আকর্ষনীয় স্থানে পরিনত করা সম্ভব। এজন্য সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM