আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে: প্রধানমন্ত্রী

রাজনীতিতে বাধা নয়, তবে আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছাড় দেয়া হবে না, ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে।’

- Advertisement -

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি ডাবল লাইন ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন।

- Advertisement -google news follower

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দুঃশাসন ও অপকর্মের কারণে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ। বিএনপি আসলে সন্ত্রাসী দল। তাদের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা, আগুন নিয়ে পুড়িয়ে মারা। মানুষের কোনো ক্ষতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না, ছেঁকে ছেঁকে ধরা হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। কারণ, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা, যুদ্ধাপরাধীরা। জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল এবং তাদের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিল। কাজেই বাংলাদেশের যাত্রা উল্টো দিকে শুরু হয়।’

- Advertisement -islamibank

‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা ক্ষমতায় এসেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এমনকি সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি, নতুন রেললাইন স্থাপন থেকে শুরু করে আমরা অনেক কাজ শুরু করি।’

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি রেল ব্যবহার করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, একইসঙ্গে অল্প খরচে অনেক বেশি পণ্য পরিবহন করা যায়। আর যাত্রীও পরিবহন করা যায়।’

‘আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেললাইন বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিল। তারা রেল বন্ধ করবে কেন? রেল লাভজনক না, রেল লোকসান। কাজেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে তারা রেল বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়।’

‘রেলের কর্মচারীদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয় কিন্তু তাদের পাওনা টাকাও সম্পূর্ণ বুঝিয়ে দেইনি। আর বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন বন্ধ করে দেয়। একদম বিধ্বস্ত অবস্থায় কোনো মতে কয়েক জায়গা চালু করা হয়। সবই তারা বন্ধ করা শুরু করেছিল।’

এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনরায় রেলের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় না করে দিলে বাজেটে তাদের জন্য টাকা থাকবে না। রেল উন্নত করতে পারবো না। কারণ, যে যত পরামর্শই দিক দেশটা আমাদের। দেশের মাটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে।’

‘সেই চিন্তা-চেতনা থেকে আমি দেশ চালাই। কবে কে কি পরামর্শ দিলো আর সেটি শুনে আমাদের চলতে হবে সেটা না। দেশের মানুষের কল্যাণে কি হবে সেটাই বিবেচ্য বিষয় আমাদের কাছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৮ সালে যখন যমুনা নদীর ওপরে সেতু নির্মাণ করি এই সেতুর মূল ডিজাইনে রেললাইন ছিল না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এর সঙ্গে রেললাইন থাকতে হবে। সেখানেও কিন্তু এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বাধা দিয়েছিল।’

‘আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় করে রেলের উন্নতি শুরু করলাম। অনেক কিছু আমরা কিনতে শুরু করলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো ২০১৪ সালে নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচন হতে দেবে না। তার কারণ হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল।’

‘কারণ, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাদের যে দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, মানিলন্ডারিং এবং এই সমস্ত অপকর্মের ফলে মানুষ তাদের ভোট দেয়নি। তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।’

উদ্বোধন হওয়া ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন উদ্বোধনের পর এই লাইনে ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। এই লাইনে রেলের গতি এনে দিয়েছি।’

‘চালকদের সতর্ক থাকতে হবে যেন একটু সাবধানে চালায়। কোন জায়গায় কতটুকু দ্রুত গতিতে চলবে সেটা ভাবতে হবে। এটি আধুনিক ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম সবটুকু লাইনই ডাবল লাইনে উন্নীত হলো।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এতে করে যাত্রীরা আরাম আয়েশে চলতে পারবে। পরিবহন কষ্টও কমে যাবে। আগের চেয়ে এক ঘণ্টা সময় কম লাগবে। কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষের দিকে। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবে।’

বিএনপি-জামায়াত যেন রেললাইন ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে দেশের জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো করা সম্ভব হয়েছে। এটা জাতীয় সম্পদ, এটা জনগণকে রক্ষা করতে হবে।’

কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রান্তে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত ছিলেন।

আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন চালুর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নতুন যুগের সূচনা হবে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না। কমে আসবে ট্রেনযাত্রার সময়।

আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ হওয়ায় ৩২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পুরো অংশ ডাবল লাইনে উন্নীত হলো।

এখন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না আশা করা হচ্ছে। ডুয়েল গেজ হওয়ায় এ পথে এখন মিটার গেজ ও ব্রড গেজ এ দুই ধরনের ট্রেনই চলাচল করতে পারবে।

লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার রেলপথে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন করতে ২০১৪ সালে ছয় হাজার ৫০৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয় একনেকে।

প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দিয়েছে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা ঋণ। এক হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। আর এক হাজার ২৬ কোটি টাকার বেশি অর্থায়ন করেছে সরকার।

২০১৬ সালের ১ নভেম্বর শুরু হয় নির্মাণ কাজ। ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে লাকসাম পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM