দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিসিএস পরীক্ষা দেই কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় টিকতে পারি না। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে ভাইভাতে গিয়ে আউট। আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে খুবই কষ্ট পান, তাকে বাধ্য হয়ে অনেক সময় ভিন্নমতের সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এটা তিনি প্রকাশও করেন।
সোমবার (২৪ জুলাই) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দলটির নবগঠিত শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপকমিটি পরিচিতি সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা কেন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয় না, পড়াশোনা কেন করেন না, এসব প্রশ্নগুলো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রায়ই করেন। কোনো ছেলে-মেয়ের ভালো ফলাফল পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেন বিসিএস দাও। আমাদেরতো লোক দরকার। সচিবালয়ে আরও কোয়ালিটি সম্পন্ন লোক দরকার। এ দেশে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নানা কায়দায়, কৌশলে ক্ষমতার মঞ্চে অধিষ্ঠিত, তারাই রাজত্ব করে গেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনের নাম শেখ হাসিনা। তার কমিটমেন্ট, সততা, নৈতিক সাফল্য, প্রশাসনিক দক্ষতা, সাহস, দৃঢ়তা, শিক্ষা, সবমিলিয়ে তিনি সবার সেরা।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ বক্তাই গৎবাঁধা বক্তব্য রাখেন বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, একটা সেট আছে, কেউ ১৯৪৯ সাল থেকে শুরু করেন, কেউ ৭৫ থেকে শুরু করেন। কিন্তু এর ভেতরে তথ্য নিয়েও কথা আছে। এতে আমাদের জ্ঞান-গরিমার পরিচয়তো দিতে পারি না।
এ দেশে অনেকেই রাজনীতি না করে ক্ষমতায় এসেছে জানিয়ে কাদের বলেন, এ দেশে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নানা কায়দায়, কৌশলে ক্ষমতার মঞ্চে অধিষ্ঠিত, তারাই রাজত্ব করে গেছেন। এ দেশে প্রধান প্রধান দলের যারা কর্তৃত্বে এবং নেতৃত্বে এসেছেন, তারা রাজনীতি থেকে আসেনি এবং তাদের উত্তরসূরি যারা তাদের ধ্যান ধারণা, মন মানসিকতা রাজনীতি থেকে আসেনি। সেই রাজনীতি উপনিবেশিক বস্তা পচা রাজনীতি। ওই রাজনীতি যারা ধারণ করে তারা মাটি ও মানুষের নেতা নয়।
‘আমাদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, বঙ্গবন্ধু পরিবার আমাদের আদর্শ। এ পরিবার আমাদের সবকিছু শিক্ষা দেয়। এই পরিবার আমাদেরকে সততা ও সাহস শিক্ষা দেয়, দুইটাই এ পরিবার থেকে পাই।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য কোনোভাবেই দেশের বাইরে থাকতে পারবে না বলেও জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। বলেন, উপকমিটির কোনো সদস্য অন্য কোনো কমিটিতে থাকতে পারবে না। এক কমিটির কোনো সদস্য অন্য উপকমিটিতে থাকতে পারবে না। উপকমিটির কোনো সদস্য জেলার কোনো সংগঠনের কোনো পদে থাকতে পারবে না। যারা আছেন তারা বাংলাদেশে থাকতে হবে, কতক্ষণ লন্ডনে, কয়েকমাস আমেরিকায়, আমাদের বাংলাদেশ এমন লোক আমাদের উপকমিটিতে কোনো প্রয়োজন নেই। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোথাও এরকম লোকজন থাকলে সেটা সংশোধন করে নেবেন।
ভালো ছেলে মেয়েদের রাজনীতিতে টানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটা ছাত্র সংগঠন আছে। অনেক কমিটি পাঁচ ছয় সাত বছর হয় না। কোথাও কমিটি হলেও কোথাও হলেও ঠিকমতো কাজ করছে না, এগুলো তদারকি করতে হবে, দেখতে হবে।
‘ইডেন গার্লস কলেজের প্রকৃত সমস্যাটা কী, তাদের নেতৃত্বে সমস্যা কী দেখার জন্য আমি সাধারণ সম্পাদককে বলেছিলাম। ছাত্র রাজনীতিতে তাদের অ্যাট্রাক্টিভ করতে হবে। সেটা আপনাদের কেউ দেখতে হবে। ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্বের গ্ল্যামার আর গাম্ভীর্য সবই হারিয়ে গেছে, ছাত্ররাজনীতির সুদিন ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশের জনগণের কাছে ছাত্ররাজনীতি ভালোবাসার হতে হবে। আগে ছাত্রদের সাধারণ মানুষ, সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা ভালোবাসতো, এখন ভয় করে। ভয় যেনো না করে, ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসলে ভালো ছেলেমেয়েরা রাজনীতিতে আসবে। আমাদের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করিডোর দিয়ে ছাত্র নেতারা হাঁটতো, তখন মেয়েরা দেখার জন্য ক্লাসরুমের দরজায় চলে আসতো, তারা দেখতো নেতা যাচ্ছে। আর এখন সরে যায়, কারণ তারা ভয় পায়, তাদের ভালোবাসতে হবে তাহলে রাজনীতিকেও তারা ভালবাসবে।’
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কে তা সময় বলে দেবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে দেশের আইসিটিতে নীরব অভ্যুত্থান হয়েছে। অথচ তিনি আসেন নীরবে, চলে যান নিঃশব্দে। আত্মপ্রচারে নিমগ্ন নয়। আমরা মাঝে মাঝে ভাবি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তিনি (জয়) কেন আসেন না। সেই প্রশ্নের উত্তরে নেত্রী বলেন, লিডারশীপ কার কাছে যাবে সময় বলে দেবে, ভাগ্য বলে দেবে। আমার কাউকে জোর করে কিছু বানাতে হবে না। সব রাজনৈতিক উপস্থিতি থেকে তিনি (শেখ হাসিনা) তাকে (জয়) বাদ রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনের সময় সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে ছিল বলে জানান কাদের। সেই সময় জয়কে আওয়ামী লীগ দাওয়াত দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কাদের বলেন, জয় বলেছিল মায়ের (শেখ হাসিনা) অনুমতি পেলে যাব, মায়ের অনুমতি ছিল না, সেই কারণে আমরা দাওয়াত করেও তাকে সম্মেলনে আনতে পারিনি।
জেএন/এমআর