শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফিন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী এ কথা জানান।
বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চেয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তিনজন এসে পুলিশের সামনে একটা বাসে আগুন দিয়ে চলে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা সাতশোরও বেশি হাতেনাতে ধরেছি। যারা আগুন ধরাতে গিয়েছিল তাদের আমরা হাতেনাতে ধরেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এদের মধ্যে যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, তাদের থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি জানি না তাদের সংখ্যা এখন কত আছে, কতজনকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে, তা আমি জানি না। আমি আপনাদের গতকালকের ফিগারটা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন সব জায়গায় আমাদের সিসি ক্যামেরা রয়েছে আমরা সেটার সাহায্য নিচ্ছি। আমাদের জনগণও এ ধরনের দুষ্কৃতকারীদের ধরিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় পুলিশের নজর এড়িয়ে গেলেও জনগণ তাদের ধরে আমাদের সামনে আনছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।’
‘মির্জা ফখরুল সাহেব…আগে ২০১৪-১৫ সালে তারা এগুলো করে পার পাননি। এবার এরকম করার যদি একটা চেষ্টা করে থাকেন এবারও তারা ধিকৃত হবেন এবং জনবিচ্ছিন্ন হবেন।’
গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, মানুষ আহত হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আরও সহিংসতা হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ তা মোকাবিলা করতে পারবে কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ এসেছে। কেউ এখানে ভায়োলেন্স করবে এদেশের জনগণ তা সহ্য করবে না। এদেশের জনগণ শান্তিপ্রিয় জনগণ। কেউ ক্রমাগত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে সেটা যেমন কাম্য নয়, কেউ এদেশে ভায়োলেন্স করবে সেটাও জনগণের কাছে কাম্য নয়।’
‘আমাদের পুলিশ দক্ষ ও পেশাদার। পুলিশের সঙ্গে আনসার বাহিনী ও তৈরি আছে, তাদের সংখ্যাও যথেষ্ট পরিমাণে। পাশাপাশি আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ড রয়েছে। তারা ২০১৪-১৫ সালে মানুষ গাড়ি-ঘোড়া, গরু-ছাগল, বাড়িঘর পুড়িয়েছে। এগুলো করে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই কাজটি যদি তারা আবারও করবে জনবিচ্ছিন্ন হবে। দেশের জনগণ আর কোনোদিন তাদের সমর্থন করবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন মার্কিন ভিসানীতি থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগ গয়েশ্বর এবং আমানকে ছেড়ে দিয়েছে, খাইয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সেখানে আর আমাদের কিছু বলার নেই। আমেরিকার ভিসানীতি আমাদের মুখ্য নয়। আমাদের দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই আমাদের প্রাধান্য, সেটাই আমাদের কাছে মুখ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমান উল্লাহ আমান রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। একইভাবে গয়েশ্বর রায়কেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি। দুই নেতা যখন গতকাল পড়ে গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর নিয়েছেন তাদের চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেই খোঁজখবর নিয়েছেন। আমরা তাদের অ্যারেস্ট করিনি, সুস্থ হওয়ার পর তারা বাড়িতে চলে গেছেন।’
বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে জানতে চাইলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কী কী প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের পুলিশ, আমাদের র্যাব, আমাদের আনসার দক্ষ। নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা থাকবে না। মুখ্য ভূমিকায় থাকবে নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। আমরা এসব তাদের জানিয়েছি।’
জেএন/এমআর