মা-বাবার জন্য মোনাজাত করার সুযোগটাও দেয়নি জিয়া- এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করারও সুযোগ দেয়নি জিয়াউর রহমান।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের ধানমন্ডির বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তখন রাস্তার ওপর বসে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া মোনাজাত করেছি।’
মঙ্গলবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) এ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্টের সময় আমি ও ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। পরিবারের সদস্যদের হত্যার কথা শুনে দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাদেরকে আসতে বাধা দিয়েছে। আমাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। তখন অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি। দেশে আসার পরে জিয়াউর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমাকে আমার মা-বাবার জন্য দোয়া পড়তে হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বলেই আত্মপরিচয় দিতে পারি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বলে বাঙালি জাতি হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে। তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারপর ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। নেমে আসে জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায়।’
‘স্বাধীনতার অসাম্প্রদায়িক যে চেতনা, সেই চেতনাকে নস্যাৎ করে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী যারা, যাদের বিচার হচ্ছিল, তাদেরকে কারাগার থেকে মুক্ত করে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। খুনিদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাদের বিচার করা না হয়।’ ‘বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। সে খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসে, ফারুককে ফ্রিডম পার্টি করার সুযোগ দেয়। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কর্নেল রশিদ, হুদাকে নিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে, যে নির্বাচনে ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি।’
‘জনগণের ভোট চুরি করে সে (খালেদা জিয়া) রশিদকে পার্লামেন্টের বিরোধী দলের আসনে বসায়, হুদাকে পার্লামেন্টের মেম্বার করে’ এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। খুনিদেরকে উৎসাহিত করে এবং একের পর এক অমানবিক কাজ করে গেছে তারা।’
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
জেএন/এমআর