প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, একজন তারুণ্যের রোল মডেল। শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি আরও বলেন, ‘অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, নির্লোভ, নিরহংকারী ও সদালাপী। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন অতি সাধারণ হয়ে। তিনি যে কোনো মানুষের প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশ স্বাধীনের পূর্বেই তিনি আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের অধীনে তিনি হকি, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস দলও গঠন করেন। তিনি খেলোয়াড়দেরকে আধুনিক পোশাক এবং ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহ করতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলায় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য শেখ কামাল স্বাধীন দেশে প্রথম ব্রিটিশ কোচ নিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের জেলা শাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি খেলোয়াড়দের স্বাবলম্বী করার নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তাদের অবসর ভাতা প্রদানেরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ১০ লাখ টাকা অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়াড় কল্যাণ তহবিল’ গঠন করেন।
তিনি বলেন, শেখ কামাল একাধারে যেমন দেশের সেরা ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্রীড়াবিদ ছিলেন, তেমনি ছাত্র হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মনে প্রাণে দেশীয় সংস্কৃতি লালন এবং চর্চা করতেন। খেলাধুলা, সঙ্গীত, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি সংস্কৃতি জগতে অমর হয়ে আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট এক ঘোর অমানিশায় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের দল জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই কালরাতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে খুনিরা প্রথমেই হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে। কাপুরুষ হন্তারকদের দল শারীরিকভাবে শেখ কামালকে হত্যা করলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অভিযাত্রায় তার প্রদর্শিত পথ, আদর্শ এবং দিক-নির্দেশনা আজও এক অনুকরণীয় মডেল।
তিনি বলেন, শেখ কামাল আমাদের মাঝে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে সদাজাগ্রত আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। আজ তার ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে আমি তাকে গভীর মমতা এবং স্নেহপরশের মধ্য দিয়ে স্মরণ করছি। আমার বিশ্বাস, শেখ কামাল-এর গঠনমূলক চিন্তা-চেতনার বাস্তবায়ন করতে পারলে অচিরেই আমাদের ক্রীড়াঙ্গন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্যের শিখরে অধিষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অবদানকে স্মরণীয় রাখার লক্ষ্যে এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ ক্রীড়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আজ তাদেরকে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার- ২০২৩’ প্রদান করা হচ্ছে। সম্মানজনক এ পুরস্কার প্রাপ্ত সবাইকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এ পুরস্কার ক্রীড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও উৎসাহিত করবে এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে চলমান অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে।
প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সব অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন।
জেএন/এমআর