সেবাসংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুয়ারে সেবা পৌঁছাতে নগরের সড়কগুলোতে বর্ষাসহ সারা বছরই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। যে কারণে ছোট-বড় সব সড়কেই দিনভর লেগে থাকে যানজট। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও।
অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসা, বিটিসিএল, কর্ণফুলী গ্যাস, সিডিএ, পিডিবিসহ অন্যান্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই মূলত নগরবাসীকে বছরজুড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সেবাসংস্থাগুলোর বক্তব্য, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা আর সেবা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর প্রয়োজনেই এই খোঁড়াখুড়ি করতে হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে, এই দুর্ভোগ সাময়িক। উন্নয়ন কাজ শেষ হলেই ভোগান্তির অবসান ঘটবে।
জানা যায়, নগরের যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর বার্ষিক পরিকল্পনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে না দেওয়ার কারণেই মূলত একই রাস্তা এক বছরে বারবার খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে জনদুর্ভোগ, অন্যদিকে বাড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ও।
নগর পরিকল্পনাবিদদের ভাষ্য, সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বাজেট ও পরিকল্পনার বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে অবগত করতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, আগামী ৬ মাস কোন কোন এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসা সড়কের উপর তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তার তালিকা দেওয়ার জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের যে সকল সড়কের কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছে, সে সকল সড়ক আগামী এক বছর যেন কাটা না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগরের পোর্ট কানেক্টিং রোডের উন্নয়ন ও নালা নির্মাণের কাজ শেষের পথে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই সড়কে ওয়াসার পানির সংযোগ লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। আর তা যদি করা হয়, ওই সড়কটি পরে আর কাটতে হবে না। এ জাতীয় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে সেবাসংস্থাগুলোকে অনেকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি।
নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া জয়নিউজকে বলেন, জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসময় অর্থ হাতে পায় ততদিনে বর্ষাকাল চলে আসে। বর্ষা মৌসুম দুই-তিনমাস বিস্তৃত থাকায় বৃষ্টির মধ্যেই বাধ্য হয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করতে হয়।
‘প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরিকল্পনার বিষয়টি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে জানানো ও জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বিষয়টি খেয়াল রাখা হলেই এক রাস্তার এই বারবার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ হবে‘- বলে মন্তব্য করেন সুভাষ বড়ুয়া।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করে না। খোঁড়াখুঁড়ির জন্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেয়। নগরে যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের বার্ষিক পরিকল্পনা যদি সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হত তাহলে এ সমস্যা থাকতো না। বছরে একই রাস্তা যাতে একাধিকবার খুঁড়তে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা যেত।
নগরবাসীর অভিযোগ, বছরজুড়ে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হলেও সেদিকে লক্ষ্য নেই কর্তৃপক্ষের। দেখা যায়, একই রাস্তা এক মাসে কয়েকবার ওয়াসা, পিডিবি, সিটি করপোরেশন, বিটিসিএল খুঁড়ছে। এসব সংস্থা ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ভবন মালিকরা অনুমোদন নিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করেন।
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত জয়নিউজকে বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতেই কেটে যায়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মো. সামসুদ্দোহা জয়নিউজকে বলেন, চসিকের পক্ষ থেকে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছিলাম। ওয়াসা চিঠির উত্তর দিয়েছে। ওয়াসা বলেছে, তারা একসাথে কাজ করতে আগ্রহী। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও উত্তর দেয়নি।
সামসুদ্দোহা আরো বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে খোঁড়াখুঁড়ি হলে অর্থ ব্যয় কম হবে। এতে প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ কিছুটা দুর্ভোগে পড়লেও সারা বছর কষ্ট করতে হবে না।
জয়নিউজ/জুলফিকার