নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রাথমিকভাবে দেশীয় ৬৮টি সংস্থাকে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে, এসব সংস্থার আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে ৬৮ সংস্থার নাম-ঠিকানা তুলে ধরা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) আশাদুল হক গণবিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন। জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘৬৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে সিলেক্ট করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এগুলোর ব্যাপারে আপত্তি নেওয়া হবে। এরপর তাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদনসমূহ যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত নীতিমালার ৪.৪ (ক) অনুচ্ছেদের আলোকে নিম্নবর্ণিত ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কারো কোন দাবি/আপত্তি/অভিযোগ থাকলে তা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আগারগাঁও, ঢাকা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করা যাচ্ছে।
কারো বিরুদ্ধে কোনো দাবি/আপত্তি/অভিযোগ থাকলে তার পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ আপত্তিকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর উল্লেখপূর্বক ৬ সেট আপত্তি দাখিল করতে হবে। আপত্তির শুনানি শেষে তা গ্রহণ বা বাতিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সারা দেশের ২১০টি বেসরকারি সংস্থা আবেদন করে। ইসির সাত সদস্যের একটি কমিটি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে ৬৮টি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য সিলেক্ট করেছে।
এতদিন ইসির পর্যবেক্ষক হিসেবে ১১৮টি সংস্থার নিবন্ধন ছিল। যাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে (www.ecs.gov.bd) পাওয়া যাবে।
>> পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনযোগ্য বেসরকারি সংস্থাসমূহের তালিকা দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তালিকায় নেই ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম
প্রাথমিকভাবে বাছাইয়ে উতরে যাওয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকায় স্থান পায়নি সম্প্রতি আলোচিত সংগঠন ‘ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম’। এই সংস্থার চেয়ারম্যান আবেদ আলীর আরেক সংগঠন ‘সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন’ও একইভাবে নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এই দুটি সংস্থা পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তারা নিবন্ধনের যোগ্য হয়নি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়ে এসে সমালোচিত হয়েছিল আবেদ আলীর সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। এবার নির্বাচনের আগে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে দেশে এনে পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় তার সংগঠন ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম। আগের বারের ভূমিকার কারণে এবার তাদের ওপর সবার নজর ছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে তারা আসলে প্রতিষ্ঠিত বা অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক নন।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, শুরু হয় নবম সংসদের আগে
>> নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু করা হয়। প্রথমে এক বছর করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে তা পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।
>> ২০০৮ সালে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল এক বছর।
>> নবম সংসদ নির্বাচনে দেশি ৭৫টি প্রতিষ্ঠান ভোট পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়।
>> ২০১১ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১২০টি সংস্থাকে। এগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়।
>> দশম সংসদে ভোট পর্যবেক্ষণে ছিল মাত্র ৩৫টি সংস্থা।
>> ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি সংস্থা। কে এম নুরুল হুদা কমিশন নিবন্ধন দেয় ১১৯টিকে। এদের মেয়াদ শেষ হয় পাঁচ বছর পর গত জুলাই মাসে। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা।
>> দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ২১০টি আবেদনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছে ৬৮টি। চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়ার আগে এসব সংস্থার ব্যাপারে দাবি-আপত্তি-অভিযোগ আহ্বান করা হয়েছে।