বিএনপি এখন কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে। আগামী নির্বাচন বর্জন করলে খাদে পড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বলেন, ‘গণতন্ত্রের পথে হাঁটলে তাদের (বিএনপি) লাভ হবে।’
শুক্রবার (১১ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘আপনারা আর কতদিন আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন? আপনাদের দল আজকে খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন খাদের মধ্যে পড়ে যাওয়া বাকি আছে। আগামী নির্বাচন বর্জন করলে খাদের মধ্যে পড়ে যাবে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই দেশ বাংলাদেশের মানুষের, অন্য কারো নয়। যদি যেতে হয়, তাহলে জনগণের কাছে যেতে হবে। বিদেশিদের কাছে গিয়ে কোনও লাভ নেই।’
বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে বিদেশিদের কাছে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করেছে বলে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনুনয় বিনয় করে শেষ পর্যন্ত দেখল, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি বিদেশিরা কোনও সমর্থন জানাল না। তারা যেভাবে চেয়েছিল, সেভাবে কিছুই হচ্ছে না। এখন তারা ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেছে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশে আসার পর বিএনপি আশা করেছিল—তাদের অভিযোগ, অনুনয়, বিনয়, দাবির বিষয়ে কিছু একটা বলবেন। কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এসেছিল—তারাও কিছু বলেনি। এতে বিএনপি বুঝতে পেরেছে বিদেশিদের পেছনে ছুটে কোনও লাভ নেই।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘চার থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেটি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা গত পরশুদিন ভারত সফর করে এসেছি। ভারত সফরকালে আমরা যাদের সঙ্গে দেখা করেছি, আলাপ করেছি, তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতির অনেক প্রশংসা করেছেন। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ভবিষ্যতেও যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে।’
দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বিএনপি ও তার মিত্ররা উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘আজকে নাকি তারা (বিএনপি) গণমিছিল করবে। গণমিছিল থেকে যদি মানুষের ওপর হামলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা হয়, মানুষের সহায় সম্পত্তি নষ্ট করা হয়, তাহলে আমরা ছেড়ে দেব না। আমরা জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’
বিএনপির অপরাজনীতি বন্ধ করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও করে কোনও লাভ হয়নি, হবেও না। বিএনপি এমন একটি দল, যে দল করলে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। মেম্বর, কাউন্সিলর, উপজেলা, চেয়ারম্যান কোনও নির্বাচন করা যাবে না। নেতাকর্মীদের কি ঠেকা পড়েছে, সেই দল করে তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হওয়ার। বিএনপিকে এখন তারেক রহমান তার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। তারেক রহমান যতদিন নির্বাচন করতে পারবে না, ততদিন কেউ বিএনপি করলে মেম্বার নির্বাচনও করতে পারবে না। অন্য নির্বাচন তো দূরের কথা। এই হচ্ছে এখন বিএনপির নীতি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি বুঝতে পারবে, কম্বল বাঁচাতে গিয়ে কম্বলটাই উজার হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি বুজতে পারবে, দল বর্জন করলেও তাদের নেতারা নির্বাচন বর্জন করেনি, করবে না।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সহযোগিতা ছাড়া বঙ্গবন্ধু যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা সম্ভব হতো না। তিনি একটি ঘুমন্ত জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা এই উত্তরণের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার বিরাট ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন বঙ্গমাতা সংসার সামলেছেন। তিনি নিভৃতচারী, মহিয়সী নারী ছিলেন। একেবারে একজন সাধারণ নারী হিসেবে তিনি জীবন যাপন করেছেন।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহচর। যিনি সুখে, দুঃখে সব সময় ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গমাতার জীবনী থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে পৃথিবীর কোনও শক্তি নেই আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আসারারুল হাসান আসুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমানের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু।
জেএন/এমআর