খুলনার জেলার দাকোপ উপজেলার এবং বাগেরহাটের মোংলার ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বনদস্যু আসাবুর বাহিনী প্রধান আসাবুরসহ ৮ জনকে অস্ত্র-গুলিসহ আটক করা হয়েছে।
গত শনিবার (১২ আগস্ট) রাতে র্যাব-৬ সদস্যদের এ অভিযানের সময় দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়।
আজ রবিবার খুলনা র্যাব সদর দপ্তার এক প্রেস ব্রিপিং র্যাব-৬ এর উপকমান্ডার লে. কমান্ডার নাজিউর রহমান বিষয়টি প্রেস ব্রিফিং বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে প্রতিষ্ঠা হতে অদ্যবধি পর্যন্ত র্যাব অখিযানে ৩৭০ টি সফল অভিযান পরিচালনা করে ৯১১ জন জলদস্যু, বনদস্যু গ্রেফতার পূর্বক ২০২৮টি অস্ত্র ও ৪২,৬৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে এই পযন্ত।
র্যাবের আহবানে ২০১৬ সাল হতে ১ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলের সর্বমোট ৩২টি জলদস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু, ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২,৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাব এর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন। সুন্দরবনে আবার যেন জলদস্যু ,বনদস্যুর অধ্যায় ফিরে না আসে সে জন্য সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলে র্যাব ফোর্সেস এর টহল নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জলদস্যু, বনদস্যুরা যখনই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তখনই র্যাব অভিযান পরিচালনা করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
ইতিপূর্বে গত ২০ নভেম্বর পাথরঘাটা, বরগুনার ও পটুয়াখালী সংলগ্ন এলাকায় জেলেদের নৌকায় ডাকাতি, লুণ্ঠন ও অপহরণের ঘটনায় জড়িত দস্যুদলের মূল সমন্বয়কারী খলিল জমাদ্দারসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব।
এছাড়াও গত ২৩ জুলাই ভদ্রা নদীতে বেশ কয়েকজন জেলেকে জলদস্যুরা অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী করে। উক্ত ঘটনায় র্যাব-৬ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৮ জুলাই অপহরণের সাথে জড়িত ৫ জন জলদস্যুকে গ্রেফতার করে এবং ১৪ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের দেয়া তথ্য মতে অন্য জলদস্যুদের গ্রেফতার করতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার গভীর রাতে র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল খুলনার দাকোপ ও মোংলার ইপিজেড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসাবুর বাহিনী প্রধান আসাবুর সানা (৪৩)সহ ৮ জলদস্যুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতার অন্য সদস্যরা হলেন, খুলনা জেলার দাকোপ থানা এলাকার বাসিন্দা মো. শরিফুল ঢালী (৩৭), মো. শাহিন সানা (২৭), মো. ইস্রাফিল সানা (২৭), বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের মো. শফিকুল ইসলাম, নড়াইল নড়াগাতির মো. রাকিব ফরাজি (২২), খুলনা শহরের বাসিন্দা সোহান মৃধা (১৯) ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের বাসিন্দা মো. আকবর আলী শেখ (২৫)।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জলদস্যুতার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য র্যাবের কাছে শিকার করেন।
আসাবুর মূলত মৃত্যুঞ্জয় বাহিনীর প্রধান আকাশ বাব ওরপে মৃত্যুঞ্জয় এর শীর্ষ এবং ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিল। সে মৃত্যুঞ্জয় এর সাথে চার বছর সুন্দরবনে ছিল। মৃত্যুঞ্জয় পাশ্ববর্তী দেশে চলে গেলে সে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াতো ও বিভিন্ন বাহিনীর সাথে মিলে দস্যুতা করত। তার কাছে একটি ডাবল বেরেল বন্দুক ছিল এবং পরে কোষ্টগার্ড কতৃক শশ্মান থেকে তা উদ্ধার করা হয়। আসাবুর ইতোপূর্বে ১টি অস্ত্র মামলায় তিন বছর কারাভোগ করে ২০১৫ সালে জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে সে ২০১৬ হতে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর উপ-প্রধান ছিল।
ছোট জাহাঙ্গীর ২০১৯ সালে র্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করেলেও সে আত্মসমর্পন করেনি। এ সময়ে সে বিভিন্ন বাহিনীর সাথে থেকে জেলেদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। আসাবুর ২০ জুলাই ২০২৩ তারিখ তার সহযোগীদের নিয়ে সুন্দরবনে চার দিন অবস্থান করে ২৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ ১০ জন জেলেকে জিম্মি করে বিপুল পরিমান অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ উত্তোলনের সাথে জড়িত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী রবিউলসহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করে ইতোমধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। তার নামে থানায় ০১টি ডাকাতি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শরিফুল ২০১৬ সালে আসাবুরের সাথে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীতে ছিল। সে পূর্বে জেলে পেশায় নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে সে আসাবুর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। সে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল বলে র্যাব জানান। গ্রেফতারকৃত ইস্রাফিল ২০১৭ সালে আসাবুরের সাথে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীতে ছিল। সে পূর্বে জেলে পেশায় নিয়োজিত ছিল। সে আসাবুর বাহিনীর অস্ত্র জিম্মায় রাখতো এবং সরবারহ করত এছাড়া জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল গ্রেফতারকৃত শাহিন ২০১৮ সালে আসাবুরের সাথে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীতে ছিল। সে পূর্বে জেলে পেশায় নিয়োজিত ছিল। সে ডাকাত দলের জন্য সদস্য সগ্রহ করত এবং জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারকৃত রাকিব আর্থিক অভাব ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে গত ২০১৮ সালে আসাবুরের সাথে ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীতে ছিল। বর্তমানে সে আসাবুর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। পূর্বে সে দিনমুজুর হিসেবে কাজ করতো। জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃত শফিকুল ২০২৩ সালে আসাবুর বাহিনীতে যোগ দেয়। আসাবুর বাহিনীর নতুন সদস্য। সে পূর্বে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। সে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারকৃত সোহান আর্থিক অভাব ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে ২০২২ সালে আসাবুর বাহিনীতে যোগ দেয়। আসাবুর বাহিনীর নতুন সদস্য। সে পূর্বে দিনমুজুর হিসেবে কাজ করতো। সে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারকৃত আকবর ২০২৩ সালে আসাবুর বাহিনীতে যোগ দেয়। আসাবুর বাহিনীর নতুন সদস্য। পূর্বে সে মাহিন্দ্রার ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতো। সে জেলেদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব জানান।
জেএন/পিআর