ইলিশের মৌসুম শুরু হলেই চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার জেলে পল্লীগুলোতে শুরু হত উৎসব। টানা প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারদের আনাগোনায় মুখর থাকত জেলে পল্লীগুলো। কিন্তু এবার যেন ভিন্ন এক চিত্র। নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৩ জুলাই থেকে সাগরে নামতে শুরু করে চট্টগ্রাম উপকূলের জেলেরা।
চলতি মাসের শুরুতে প্রথম পূর্ণিমার জো’তে তাদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছিল রূপালি ইলিশ। হাসি ফুটে উঠেছিল জেলেদের মুখে। কিন্তু এরপর অমাবস্যার জো’তে এসে যেন মিলিয়ে গেছে তাদের সেই হাসি। কাঙ্খিত সে রূপালি ইলিশ ধরা পড়ছে না তাদের জালে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়েছে। আর যার প্রভাব পড়ছে ইলিশ আহরণে। তবে তাদের প্রত্যাশা আর কয়েকদিন পর সামনের জো’তে ধরা পড়তে শুরু করবে ইলিশ। আবারও হেসে ওঠবে জেলেদের মুখ।
চট্টগ্রামের সদ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী উপজেলা এবং মহানগরীর ২৭ হাজার জেলে নিয়মিত সাগরে মাছ ধরে থাকেন। ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজারের অধিক ফিশিং বোট সাগরে চলাচল করে। এর মধ্যে উপকূলীয় জেলেদের অর্ধেকের বেশি নৌকা বছরের অধিকাংশ সময় ব্যবহৃত হয় না। শুধু ইলিশ মৌসুমে তারা সাগরে নৌকা নিয়ে যান। এদের বেশির ভাগ ধার-দেনা অথবা দাদন নিয়ে নৌকা ও জাল মেরামত করে সাগরে নামেন। তাই ইলিশ ধরা না পড়লে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন এসব স্থানীয় জেলে ও তাদের পরিবার।
উপকূলীয় বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতা বিক্রেতার সেই হাঁকডাক নেই। মাঝেমধ্যে দুয়েকজন জেলে সাগর থেকে নৌকায় করে অল্প কিছু মাছ নিয়ে আসছেন। আর তা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। তবে দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। পরে পাইকারদের হয়ে এসব মাছ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে।
কাট্টলী এলাকার জেলে গোকুল দাস বলেন, ‘নৌকা নিয়ে সাগরে আসা যাওয়ার জ্বালানি খরচ এবং মজুরদের বেতনও তুলতে পারছি না। পুরো নৌকায় ২০ কেজির মতো মাছ এনেছি।’
দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার জেলে সর্দার খেলন জলদাস বলেন, ‘দুশো নৌকা নিয়মিত সাগরে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিনই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত পূর্ণিমার জো’তে মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু অমাবস্যার জো’তে এসে যেন আবারও সব অন্ধকার। সারা বছর অপেক্ষার পর দাদনের টাকা নিয়ে জাল ও নৌকা মেরামত করে সাগরে নেমেছে বেশিরভাগ জেলে। কিন্তু কাঙ্খিত মাছের দেখা না পেলে পথে বসতে হবে তাদের পরিবারকে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আমাদের বর্ষা মৌসুমে এখন হেরফের হচ্ছে। ইলিশের প্রজনন, উৎপাদনেও তাই হেরফের হচ্ছে। বৃষ্টি, নদীতে স্রোত, পানির চাপের সঙ্গে ইলিশের প্রজনন-উৎপাদন সম্পর্কিত।’ তিনি আরও বলেন, আগে মে, জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টি হত, এখন আগস্ট মাসে এসে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। এখনো সামনে বেশ কয়েকটি জো রয়েছে। আশা করছি, সামনে জেলেদের জালে আবারও ইলিশ ধরা পড়বে।’
জেএন/এমআর