চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করলো ভারতের চন্দ্রযান-৩। এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়লো তারা। চাঁদে এর আগের সব মিশনে চন্দ্রযানগুলো নিরক্ষরেখার কাছাকাছি নেমেছিল। তবে অনাবিষ্কৃতই ছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের দক্ষিণ মেরু।
ভারতের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, চন্দ্রযান-৩ থেকে শিগগির চাঁদের পৃষ্ঠে একটি রোভার নামানো সম্ভব হবে এবং সেটি পৃথিবীতে ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারবে।
এদিকে, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ইসরোর কর্মকর্তারা। চন্দ্রজয়ের সাফল্যে উদ্বেলিত ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ভারত চাঁদে পৌঁছেছে। সফট ল্যান্ডিং করতে পেরেছি আমরা।
এদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেষ ১৫ মিনিটের যাত্রা। প্রথমে চাঁদের ওপর ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্ডার বিক্রমকে। অবতরণ স্থল থেকে তার দূরত্ব ছিল ৭৪৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের দিকে নেমে আসার প্রক্রিয়ায় ল্যান্ডারের গতিবেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এরপর গতি কমিয়ে আনা হয়।
৬৯০ সেকেন্ড এভাবে ধীরে ধীরে নামার পর ল্যান্ডারের ইঞ্জিনগুলো কাজ করা শুরু করে। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে পাঁচটি ইঞ্জিন ছিল। তৃতীয় চন্দ্রযানে ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে চার করা হয়েছে। সফট ল্যান্ডিংয়ের সময় দু’টি ইঞ্জিন চালু রাখা হয়। দ্বিতীয় চন্দ্রযানে যে সেন্ট্রাল ইঞ্জিন ছিল এবার সেটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।
ল্যান্ডিংয়ের সময় গতিবেগে গণ্ডগোল হলে বা সেন্সর কাজ না করলে যেন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, সেজন্য সফটওয়্যার আরও উন্নত করা হয়।
চাঁদের মাটি থেকে যখন দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার, তখনই শুরু হয় আসল চ্যালেঞ্জ। এই পর্যায়ে গিয়েই আগেরবার মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিল চন্দ্রযান-২। কিন্তু এবার তা হয়নি। শেষ সাড়ে সাত কিলোমিটারের পথ অত্যন্ত সতর্কভাবে এবং সময় ও গতিবেগ হিসেব করে হালকা পালকের মতো নামে ল্যান্ডিং স্পটে।
চন্দ্রজয়ের পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, টিম চন্দ্রযানকে আমার শুভেচ্ছা। তারা এই মুহূর্তটির জন্য বছরের পর বছর পরিশ্রম করেছেন। দেশের ১৪০ কোটি মানুষকে শুভেচ্ছা। অন্তরীক্ষে নতুন ভারতের উদয় হলো। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায় (ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে)। তবে দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমার মনও ওখানেই ছিল।
জেএন/এমআর