‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুর। সেই চাঁদপুরেই ইলিশের দাম কমছে না। ফলে দেশের অন্যান্য স্থানেও ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা আপাতত দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ইলিশের ক্রেতা ও ভোক্তারা বলছেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ডাবের দাম নির্ধারণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, অথচ দেশের জাতীয় সম্পদ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ইলিশের দাম নিয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই, তদারকি নেই।
দেশের ইলিশ মাছের অন্যতম পাইকারি বাজার চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাট বাজার। এখানে গত বছরও প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে। কিন্তু এবার মাছঘাট বাজারে ইলিশের আকাল।
প্রতিদিন এখানে এক থেকে দেড় হাজার মণের বেশি ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে না। তবে দামও অনেক বেশি। ইলিশের দাম কমানোর বিষয়ে সরকার বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন ক্রেতা-ভোক্তারা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, দেশের অন্যান্য ইলিশের বাজারে অবস্থা যাচাই করে দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মাছঘাটের ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। জুলাই মাসে ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও তখন মাছ ছিল না। আগস্ট মাসেও দাম কমেনি। সেপ্টেম্বরে কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
মাছঘাটে ইলিশ আসাটা দিন দিনই কমছে। গত বছর এ সময় প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচায় সরগরম থাকত মাছঘাট বাজার। সেখানে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইলিশ আসে মাত্র এক হাজার মণ। এর মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ আসে প্রায় এক শ মণ।
মাছঘাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য স্থানের এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫শ থেকে ১ হাজার ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স্থানীয় চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭শ টাকা কেজি।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ার পর প্রথমে তাঁরা তেমন মাছ পাননি। তবে কয়েক দিন ধরে সাগর থেকে ফিশিং ট্রলার ও ট্রাকে ছোট–বড় সব আকারের কিছু ইলিশ আমদানি হয়েছে, যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।
ফলে আশানুরূপ ইলিশ বেচাকেনা করতে পারেননি। এর মধ্যে নোয়াখালী, হাতিয়া ও ভোলার ইলিশ ছিল বেশি। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ছিল কম।
ইলিশের চাহিদা অনুপাতে আমদানি অনেক কম বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল মানিক জমাদার। তিনি বলেন, বাপ-দাদা তথা ব্রিটিশ আমল থেকেই মাছঘাটে উন্মুক্ত খোলাবাজারে মাছ তোলার পর নিলামে ডাক তুলে বিক্রি করা হয়।
এবার ইলিশের দাম ওঠানামা করলেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়েছে। সামনে আর যে কদিন আছে, এতে ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছেন না।
ইলিশের দাম নির্ধারণ নিয়ে কিছু একটা সরকারের করা উচিত বলে মনে করেন ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, নদীতে বা সাগরে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাজারে গেলে দেখা যায় দাম অনেক বেশি, এটা দুঃখজনক।
জেএন/পিআর