বাবর আজমের নেতৃত্বে পাকিস্তানের পেস ইউনিটকে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সেরা ইউনিট মানছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। এশিয়া কাপের জন্য পাকিস্তানের নির্ধারিত স্কোয়াডে আছেন হ্যারিস রউফ, মুহাম্মদ ওয়াসিম (জুনিয়র), নাসিম শাহ, শাহিন আফ্রিদিসহ পাচঁ পেসার।
তবে বরাবরই সবার নজর কেড়েছেন নাসিম শাহ আর শাহীন আফ্রিদি।
ভারত পাকিস্তান মহারণের শুরুতেই ১১ রান করা রোহিত শর্মাকে বোকা বানিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান শাহীন শাহ আফ্রিদি। এরপর বিরাটকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে দারুণ ব্রেকথ্রু দেন এই বাহাঁতি পাকিস্তানি।
তবে নিয়মিত ইনজুরি যেন চিরশত্রু এই পাকিস্তানী বোলাররের।
সর্বশেষ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে চোট থেকে ফিরে এসে আবারো ইনজুরিতে পড়েন এই ক্রিকেটার। আর চোট এক বছর টেস্ট ক্রিকেট থেকে দূরে রাখে আফ্রিদিকে।
ইনজুরিতে পড়ার হতাশায় এক সময় ক্রিকেটও ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলেন পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি।
তবে তার এই খেলা ছেড়ে দেওয়ার খবর নতুন নয়। জাতীয় দলে অভিষেকের পর ইনজুরির কারণে একের পর এক সিরিজ মিস করার কারণে বারবার হতাশা গ্রস্থ হয়ে ক্রিকেটকে চির বিদায় বলে দিতে চেয়েছিলেন ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এইবোলার।
পাকিস্তানের পেস ইউনিটের অন্যতম ভরসা পাত্র হয়ে উঠা আফ্রিদির নাম ডাক হয়েছে বিশ্বক্রিকেটে। এখন অবসর নিলেও পাকিস্তানের ক্রিকেটে খোদাই করে লিখা থাকবে এই পেসারের নাম। কেননা ২০১৮ সালে সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে অভিষেকের পর শাহীন আফ্রিদির গায়ে উঠেছে পাকিস্তানের জার্সি। তবে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেকের এক বছর আগে ২০১৭ সালে ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলেন এই পাকিস্তানি পেসার।
২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলার পর পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সুযোগ পান তরুণ এই পাকিস্তানি বোলার।
এরপর লাহোর কালান্দার্সের হয়ে পাকিস্তান সুপারলীগে ডাক পান শাহীন আফ্রিদি। তবে কয়েকটি ম্যাচ খারাপ খেলার পর পুরো ক্রিকেটকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন শাহীন আফ্রিদি।
২০২০সালের সাবেক পাকিস্তানী পেসার আকিব জাভেদ একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলে, যখন শাহীন কালান্দার্সের হয়ে খেলছিলো তখন শুরুর দিকে কয়েকটি ম্যাচ খারাপ খেলেছিলো সে। তখন সে আমার কাছে এসে বলল সে ক্রিকেট খেলতে চায়না এবং তার উপর বিনিয়োগকৃত টাকা সে ফেরত দিতে চায়। তখন আমি তাকে বলেছিলাম যে কেউ রান করতে পারে এবং সে একদিন সুপার স্টার হয়ে উঠবে। এরপর কয়েক ম্যাচ তাকে রেস্ট দিয়ে আবার মুলতানের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ দিয়েছিলাম যেখানে সে পাঁচ উইকেট শিকার করে ছিলো। এটি ছিলো মূলত তার প্রতিভার উপর বিশ্বাস রাখা এবং তাকে একটি সুযোগ প্রদান করা।
তখন যদি আফ্রিদি খেলা ছেড়ে দিত তাহলে হয়তো জাতীয় দলে কখনও সুযোগ পেতেন না তিনি।
এই ঘটনার ১ বছর পর ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তান জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। এরপর দেখাতে থাকেন নিজের বোলিং বাজিমাত।
এর আগে ৩ এপ্রিল ২০১৮ সালে ওয়েস্টইন্ডিজের বিপক্ষে শর্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটে অভিষেক হয় আফ্রিদির।
এরপর একই বছরের ৩ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় পাকিস্তানের বাহাঁতি এই পেসারের।
অভিষেকের পর এখনো পর্যন্ত ৪১ ম্যাচে ৫ ইকোনোমিতে ৮০ উইকেট শিকার করেছেন আফ্রিদি। ৫২টি টিটুয়েন্টি খেলে ৭ ইকোনোমিতে শিকার করেছেন ৬৪ উইকেট। আর টেস্ট ক্রিকেটে ২৭ টি ম্যাচে ৩ ইকোনোমিতে ১০৫ উইকেট।
শাহীন শাহ আফ্রিদির ক্রিকেট হাতেখড়ি হয়ে ছিলো তার আপন বড় ভাই রিয়াজ আফ্রিদির হাত ধরে।
২০০৪ সালে যখন রিয়াজ পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র টেস্ট খেলে ছিলেন তখন শাহীন শাহ আফ্রিদির বয়স ছিলো মাত্র ৪ বছর। টেনিস বলদিয়ে মূলত পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চল খাইবার পাখতুনখোয়ার লান্ডি কোটালের টাটারা পাহাড়ের মাঠে খেলতেন শাহীন আফ্রিদি।
এরপর ২০১৫ সালে প্রথমবরের মতো ক্রিকেটের শক্ত বলহাতে নিয়ে জায়গা করে নেন অনুর্ধ্ব ১৬ দলে। এর ৩ বছর পর শাহীন শাহ আফ্রিদি সুযোগ করে নেন এবং জাতীয় দলে হয়ে যান পাকিস্তান পেস ইউনিটের অন্যতম ভরসা।
জেএন/এমআর