এশিয়া কাপে তিনবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। কোনোবারই আনতে পারেনি শিরোপা। তাই এবার এশিকাপে সেই আক্ষেপ পূরণই ছিল বড় লক্ষ্য! কিন্তু ঠিক উল্টো রথে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে হেরে এখন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে টাইগারদের টিকে থাকাই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। আজ পাকিস্তানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লাহরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানের দলের বাঁচা-মরার লড়াই। তবে আফাগানদের বিপক্ষে জিতলেই হবে না। দ্বিতীয় পর্বে যেতে হলে তাকিয়ে থাকতে হবে রশিদদের হারের জয়-পরাজয়ের দিকে। আর আফগানরা আজ জিতে গেলে টাইগারদের পাকিস্তান থেকেই ফিরতে হবে দেশে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায়। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৬২ রানে হারিয়েছে সব উইকেট।
জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারালেও লঙ্কান ৬৬ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয়। অধিনায়ক সাকিব হারের কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা যেমন স্বীকার করে নিয়েছেন। তেমনি দল হিসেবে খেলতে না পারার আক্ষেপও ঝরেছে তার কণ্ঠে। তবে সব ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। সাকিব বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার আরও দায়িত্ব (ব্যাটিং) নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু এ ম্যাচে আমরা দল হিসেবে ব্যাটিং করতে পারিনি। আমাদের আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে। আশা করি আমরা শক্তভাবে ফিরে আসবো।’
আফগানদের বিপক্ষে টাইগারদের বাঁচা-মরার ম্যাচটি শুরু হবে আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৩০ মিনিটে। শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বাংলাদেশের। এই ফরম্যাটে গ্রুপপর্বে প্রতিটি দল দু’টি করে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপপর্বে তিন দলের মধ্যে সেরা দু’দল পরের রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাবে। প্রথম ম্যাচ হেরে এশিয়া কাপে গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লঙ্কানরা। আর সাকিবদের আফগানিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কারণটাও স্পষ্ট, বাংলাদেশ সফরে এসে গেল জুলাইয়ে ২-১ ব্যবধানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছিল আফগানিস্তান। যে কারণে আজ কিছুটা হলেও মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে আফগানরা। সেই সিরিজে তামিম ইকবালের অবসরের নাটকের জের থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। যে কারণে বাংলাদেশের মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল আফগানিস্তান। ২০১৫ থেকে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ছাড়া শুধু সিরিজ হার আফগানদের বিপক্ষেই।
এবার বাংলাদেশ দলকে ঘিরে নানা রকমের নাটক শেষ হয়নি। নয়া অধিনায়ক সাকিব দলকে পুনর্গঠন কতটা করতে পারবেন- তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। তার উপর ইনজুরি আর জ্বরের আঘাতে ছিটকে গেছে বেশ কয়েজন ক্রিকেটার। দেশসেরা ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল নেই ইনজুরির কারণে। শেষ পর্যন্ত লিটন দাসকেও জ্বরের কারণে দলে পাওয়া যায়নি। আসর শুরুর আগেই ছিটকে যান পেসার ইবাদত হোসেন চৌধুরীও। সব মিলিয়ে এশিয়াকাপে বেশ নড়বড়ে দল নিয়ে লড়াই করছে টাইগাররা। অবশ্য পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশই। ১৪ ম্যাচের মধ্যে ৮টিতে জয় ও ৬টিতে হেরেছে টাইগাররা।
তবে লঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিং পারফরমেন্সের পর প্রশ্ন উঠেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টাইগাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা। প্রখম ম্যাচে দলের হয়ে একা লড়াই করে ৮৯ রানের ইনিংস খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত জানান, বাজে শুরুর পরও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রাখে টাইগাররা। তার বিশ্বাস ঘুরে দাঁড়াবে দল। নাজমুল বলেন, ‘আমরা এখন ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে ভাবছি না। এই মুহূর্তে আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। পাকিস্তানে আমরা একটি ভালো ম্যাচের প্রত্যাশা করছি।’ দেশের মাটিতে আফগানদেন বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারলেও জয় পায় টি-টোয়েন্টিতে। আর সেই জয়ই আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে শান্তকে। তিনি কলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ভালো করতে না পারলেও, টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছি আমরা। কিন্তু আমরা অতীত নিয়ে ভাবছি না। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস । আমি মনে করি, আমাদের খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কীভাবে ভালো করা যায় সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিত।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে ইতিমধ্যেই লাহোরে পৌঁছেছে সাকিবরা, সেখানে সেরে নিয়েছে অনুশীলনও। ভ্রমণ ক্লান্তি আর প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা সামলে জয়ের জন্য লড়াই করাই এখন সাকিবের একমাত্র লক্ষ্য! বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়ে আছে তাদের দিকে দারুণ কিছুর অপেক্ষায়।
জেএন/এমআর