চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মূল কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। টানেল যানচলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটির উদ্বোধন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এখন টানেল ঘিরে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ চলছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্মিত টানেলটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্মকর্তারা। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি থানার প্রস্তাবও দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। যদিও এখন পর্যন্ত থানার অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় আপাতত দুই প্রান্তে দুটি ফাঁড়ি দিয়ে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর পুলিশের বন্দর জোন। এছাড়া প্রকল্পের কেপিআই (কী পয়েন্ট ইন্স্টলেশন) সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগর পুলিশের কাছে অতিরিক্ত ফোর্সের চাহিদাপত্র দিয়েছে বন্দর জোন।
বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, থানা অনুমোদন হয়নি। আপাতত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় কে-৯ নামের একটি বিশেষায়িত ডগ স্কোয়াড চাওয়া হয়েছে। কেপিআই নিরাপত্তার জন্য একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই-সশস্ত্র), নায়েক দুজন এবং ১০ জন কনস্টেবল চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ফাঁড়ির জন্য একজন এসআই (নিরস্ত্র), এএসআই (নিরস্ত্র) চারজন ও কনস্টেবল ২৫ জনসহ মোট ৩০ জনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় মোটরসাইকেল, টহল গাড়ি ও পেট্রোল কারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।
নগর পুলিশের ডিসি (সদর) আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, থানার জন্য টানেলের দুই প্রান্তে জায়গা নির্ধারণ করা রয়েছে। অনুমোদন পেলে স্থাপনার কার্যক্রম শুরু হবে। আপাতত দুই পাশে দুই থানার ফোর্সের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে।
এদিকে, টানেলের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ বলেন, টানেলের দুই সড়কপথের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। টোল প্লাজা ও অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজও শেষ। যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক কাজও শেষ পর্যায়ে। পুরো প্রকল্পের মোট কাজের ৯৮ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। অক্টোবরে উদ্বোধনের পর যানচলাচল শুরু হয়ে যাবে এবং সঙ্গে আনুষঙ্গিক কাজও চলতে থাকবে।
জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী- টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০ গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে ওঠবে নতুন শিল্পকারখানা।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে।
চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।
সবশেষ গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।