চলতি মাসের শুরুতে রাজধানী বিমানবন্দর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এরই ফলে গত রবিবার থেকে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার পথ বাধাহীন যাত্রাপথ পেলো রাজধানীবাসী।
খুব শীঘ্রই এমনই এক যাত্রা আনন্দ উপভোগ করবেন চট্টগ্রামবাসীও। ইতিমধ্যে অনেকটাই প্রস্তত চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। অপেক্ষার সময়ও শুরু হয়ে গেছে দ্বার খোলার।
নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতিও আশাপ্রদ। নভেম্বরের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে চট্টগ্রামের প্রথম এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এজন্য রাত-দিন চলছে কাজ।
আরো পড়ুন : চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে হবে
চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে উদ্বোধনের তোড়জোড় শুরু হলেও এটি ব্যবহারে সুফল পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। কারণ ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে উঠা-নামার জন্য বিভিন্ন স্থানে ১৪টি র্যাম্প সংযোজনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও নির্মাণ হয়নি। ফলে র্যাম্প ছাড়াই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়।
র্যাম্প ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েটি খুলে দেওয়া হলে মূলত বিমানবন্দরের যাত্রীরাই এটি ব্যবহার করতে পারবেন বলে মত প্রকাশ করে নগর বিশেষজ্ঞরা।
জানান, র্যাম্প ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে নগরীর যানজট নিরসনে কতখানি ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন থেকে যায়। তাছাড়া টানেল চালুর পর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নগরীর পতেঙ্গা অংশে যে যানজট হবে তাও সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের একমাত্র টানেল আগামী নভেম্বরে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এটি চালু হলে নগরজুড়ে যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে। ফলে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর চিন্তা করছি।
মূলত অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে আমাদের চেষ্টা থাকবে ১৬ কিলোমিটার পুরো এক্সপ্রেসওয়ে চালু করার, এমনটাই জানালেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন্ শামস্।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষও গত শনিবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন শেষে ঘোষণা দিয়েছেন, চট্টগ্রাম নগরীতে যানজটের ধকল কমাতে আগামী নভেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করা হবে। বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত খুলে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, বন্দর নগরীর ক্রমবর্ধমান যানজট কমাতে এবং সেই সাথে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও সিটি আউডার রিং রোড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য এ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেডসহ ওই এলাকার শিল্প কারখানার আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এ এক্সপ্রেসওয়েটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে টানেলমুখী অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমিয়ে মহানগরীকে যানজট মুক্ত রাখাই এ মেগা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
তিন দফা ব্যয় বাড়িয়ে সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার তিনশ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৪টি র্যাম্প। এরমধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত গার্ডার বসানো শেষ হয়েছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের পিলার নির্মাণও এখন শেষ। চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত চলছে গার্ডার বসানোর কাজ। দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে এখনও গার্ডার বসানো হয়নি।
দ্রুত কাজ শেষ করতে রাতে-দিনে কাজ করা হচ্ছে। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ১৪ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। বাকি দুই কিলোমিটার অক্টোবরের আগেই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাতে-দিনে কাজ চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক সিডিএর প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, মূল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ ৮০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা হবে। এরপর নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরের শুরুতে এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৪টি র্যাম্পের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
জেএন/পিআর