রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে ২ ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ বরখাস্ত হয়েছেন। ঘটনার শুরু থেকেই এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম আলোচনায় আসে। পরে জানা যায়, তিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী সানজিদা আফরিন। সানজিদার দাবি, তার স্বামী আজিজুল হক প্রথমে এডিসি হারুনকে আঘাত করেন।
শনিবার রাতে ঘটনার সূত্রপাত হলেও এ বিষয়ে এডিসি সানজিদার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন সানজিদা। মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী সানজিদা আফরিন ৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার(এডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
সানজিদা বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকদিন ধরে সিভিয়ার পেইনে (তীব্র ব্যথায়) ভুগছিলাম। সেদিন (ঘটনার দিন) পেইনটা একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছিল। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (হারুন অর রশীদ) জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে, তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।
‘স্যারকে জানালে তিনি আমাকে বলেছিলেন- ঠিক আছে, আমি আশপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দিচ্ছি। এরপর স্যার আসলেন। আসার পর একজন ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর তিনি কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকু আর ইসিজিও করানো হলো।’
সানজিদা বলেন, “এই ঘটনার সময় যে রুমে ইটিটি করানো হয় সেই রুমে ছিলাম আমি। ইটিটি করানোর ১৫/২০ মিনিট পর আমি বাইরে একটা গণ্ডগোলের শব্দ শুনি। আমার কানে প্রথম এসেছিল হারুন স্যারের কণ্ঠ- ‘ভাইয়া, আপনি আমার গায়ে হাত দিলেন কেন? আপনি তো আমাকে মারতে পারেন না। আমাকে মারছেন কেন?’
“এরপর হট্টগোলের মধ্যে দেখলাম আমার হাজবেন্ডসহ বেশ কয়েকজন স্যারকে (হারুন অর রশীদ) মারতে মারতে ইটিটি রুমের ভেতরে নিয়ে আসলেন। ওই সময় স্যার নিজের সেফটির জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোনার দিকে দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতগুলো লোক ঢোকার কারণে তখন সেখানে একটা বিশ্রী পরিবেশ তৈরি হয়। তখন আমি চিৎকার করছিলাম।”
তিনি বলেন, ‘এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন- এই, ভিডিও কর। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে, তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম।
‘যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। এ সময় তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না, ওই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।
‘ওই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলে এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করে। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও আসলেন। এর ১০/১৫ মিনিট পর থানা ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।’
এসব ঘটনার স্থান কোথায় এবং কয়টার দিকের ঘটনাটি ঘটে?- জানতে চাইলে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্যার (হারুন অর রশীদ) এসেছিলেন; পরে ডাক্তারও এসেছিলেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।’
আপনি অসুস্থ, সেটা আপনার হাজবেন্ড (আজিজুল হক) জানতেন না?- এমন প্রশ্নের জবাবে সানজিদা বলেন, ‘আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানত। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাব, সেটা সে জানত না। এর আগেও বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সামহাউ সে মিস করে গিয়েছিল অথবা বিজি ছিল। যেহেতু ছয়/সাত দিন ধরে আমার সিভিয়ার চেস্ট পেইন হচ্ছিল… যাই হোক, সবসময় তো পরিস্থিতি একরকম থাকে না যে আমি তার সঙ্গে শেয়ার করব। যেহেতু আমার সিভিয়ার পেইন হচ্ছিল, তাই আমি নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।’
তারপরও কীভাবে আপনার স্বামী জেনেছেন যে আপনি হাসপাতালে আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড কীভাবে জেনেছে সেটা আমি জানি না।’
আপনার কী মনে হয় তিনি আপনার পেছনে কাউকে দিয়ে নজরদারি করছেন?- জবাবে তিনি বলেন, ‘করতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘পরকীয়া’র অভিযোগের বিষয়ে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘উনি (হারুন অর রশীদ) আমার সিনিয়র কলিগ। এর বাইরে আর কোনো বিষয় নেই।’
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমার স্বামীর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’
জেএন/এমআর