চট্টগ্রামের রাউজানে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়’কে অপহরণ পূর্বক নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার আরো লোমহর্ষক তথ্য জানতে পেরেছে র্যাব।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া যুবক উচিংথোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে শনিবার গ্রেফতারের পর তারা র্যাবকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়।
আজ রবিবার (১ অক্টোবর) র্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, রাউজানের চাঞ্চল্যকর হৃদয় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত আরো দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরমধ্যে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে উচিংথোয়াই মারমা ও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়।
উচিংথোয়াই মারমা রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানা কলমপতি এলাকার মংহ্লাজাই মারমার ছেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরী বান্দরবান জেলার রুমা থানা আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা মৃত ক্য থোয়াই অং চৌধুরীর ছেলে।
গ্রেফতারকৃতদের বরাতে লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকদের সাথে মুরগীর খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯) এর বাগবিতণ্ডার জের ধরে গত ২৮ আগষ্ট হৃদয়কে অপরহরণ করা হয়।
একদিন পর ২৯ আগষ্ট বিকালে চট্টগ্রামের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড়ে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন।
পুরো হত্যাযজ্ঞে তিনটি পার্ট ছিল। এরমধ্যে অপহরণ গ্রুপ, কিলিং গ্রুপ ও লাশ গুম গ্রুপ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধু যারা খামারে কাজ করতো। এরমধ্যে উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে।
উচিংথোয়াই মারমা এবং তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট কল করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে।
১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এরমধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।
যেভাবে লাশ গুম করা হয়: পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়।
এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশ গ্রহণ করে। এরমধ্যে র্যাব দুই জন এবং রাউজান থানা পুলিশ আরও ছয় জনসহ মোট আট জনকে গ্রেফতার করে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে।
হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলার বিষয়ে কোন তথ্য দেয়নি গ্রেফতারকৃতরা। তারা র্যাবকে জানিয়েছে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে তারা কিছু জানে না।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিকে লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয় গ্রামবাসী। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর পিটুনিতে তার মৃত্যু হয়।
জেএন/রাজীব