আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আলোচিত সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এ আসনে নৌকার মাঝি হচ্ছেন তাঁরই স্ত্রী শাহীনা আকতার চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে দলকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন কাদের।
যে কারণে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শেষ পর্যন্ত মাইনাস হতে হচ্ছে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা আবদুর রহমান বদিকে।
এদিকে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে আলোচিত আবদুর রহমান বদি বাদ গেলেও তাঁর স্ত্রীকে নৌকার মাঝির দায়িত্ব দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। শাহীনাকে প্রার্থী করা হলে নৌকা বিজয়ী হবে কি-না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আদিল চৌধুরীর কাছে বদি’র বাদ পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জয়নিউজকে বলেন, ’উখিয়া-টেকনাফের বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদি এ আসন থেকে ২৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ঢাকা নিয়ে গেছে। যাদেরকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মনোনয়ন ফরম কিনে দিয়েছেন। কেন তিনি এটা করেছেন সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ’বদি নৌকা মার্কা নিয়ে আবারও প্রার্থী হতে পারবে জেনে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ টাকার আশায় বসে রয়েছে।’
বদি’র স্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত বদি’র স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছে এই কথার কোন ভিত্তি নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা তাঁর জন্য কাজ করব।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদে শিক্ষক, ব্যাংকার, প্রকৌশলী ও আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং ইয়াবা ইস্যু নিয়ে তুমুল আলোচনায় ছিলেন বিতর্কিত সাংসদ আবদুর রহমান বদি। পাশাপাশি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নিজে যেমন বিতর্কে জড়িয়ে যান, ঠিক তেমনি দলকেও ফেলেন নানা বেকায়দায়। যে কারণে প্রতিনিয়ত তাকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে বিরোধীতা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আম-জনতার কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষেও ছিল আবদুর রহমান বদি।
ইতিপূর্বে কক্সবাজার-৪ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুই বার জাতীয় সংসদে যান আবদুর রহমান বদি। টানা ১০ বছর সংসদ সদস্য থাকার কারণে বিএনপির দুর্গে সাধারণ জনগণের মাঝে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। কিন্তু ইয়াবা ও অন্যান্য ইস্যুতে তৈরি হওয়া বিতর্কগুলো শেষ পর্যন্ত বদির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার পরও নৌকার টিকেট নিশ্চিত হয়নি এবার আবদুর রহমান বদির।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ আসন থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪-৫ জন প্রার্থীর দলীয় অবস্থান শক্ত হলেও প্রায় সবারই জনপ্রিয়তা রয়েছে কম-বেশি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী সোহেল আহমদ বাহাদুর জয়নিউজকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের উখিয়া-টেকনাফের আসন সম্পর্কে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আবদুর রহমান বদি’র স্ত্রী শাহীনা দলের কোন নেতা-কর্মীকে যেমন চেনেন না, তেমনি নেতা-কর্মীরাও তাকে চেনে না। তিনি কোনদিন রাজনীতিও করেননি। আর তিনি দলের কেউ নন। তিনি কেবল একজন গৃহিণী। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি উখিয়া-টেকনাফের মানুষ মেনে নিতে পারছে না। আমিও ওবায়দুল কাদেরের এই কথায় হতাশ। অবিলম্বে এই আসনে আওয়ামী পরিবারের একজন ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তিনি এও বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ডেকে দল যাকে নমিনেশন দেয় তাঁর জন্য কাজ করতে বলেছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি কোন তদারকি সংস্থার রিপোর্টে আবদুর রহমান বদির স্ত্রীর নাম আছে সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে এই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এ আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করা কষ্টকর হয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’
জয়নিউজ/জুলফিকার