ভোরে শিউলি ঝরে ভরে গেছে পাহাড়ের বুক। সিঁড়িতে পা ফেলতেই অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার উদ্ভব হয়েছিল বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গার সন্ন্যাসী পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত মেধস মুনির আশ্রমে।
শরতের দুপুরে নীলাকাশে সাদা মেঘ। পাহাড়ের কোল জুড়ে সবুজের সমারোহ। রূপালী রোদ ছায়ার সাথে খেলে যায় পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে।
গোলাপি আভা ছড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই সুউচ্চ পাহাড় চূড়ায় বেজে চলে ঢাকের বাদ্য। সেই সাথে বাজতে থাকা কাঁসা-ঘণ্টার মূর্ছনায় ভক্ত হৃদয় নাচতে থাকে তালে তালে। থেমে থেমে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি শোনা যায় বহুদূর থেকে। ছড়িয়ে পড়া ধূপের গন্ধে এক অনন্য আবেশ ভর করে সন্ন্যাসী পাহাড়ে।
প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতার সন্ন্যাসী পাহাড়ের ১৪০টি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে মেধস মুনির আশ্রমের মূল মন্দির। এই মন্দিরে প্রতিদিনই পূজিত হন দেবী দুর্গা। মেধস আশ্রমে প্রতিবছর মহাসমারোহে উদযাপন করা হয় মহালয়া।
মহালয়া উপলক্ষে শত শত পুণ্যার্থী, পূজার্থী, ভক্তের সমাগম হয় এ আশ্রমে। মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয় এইদিন। এবারও চলছে মহালয়া উদযাপনের নানান প্রস্তুতি। এরপর দেবী পক্ষ।
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নে মেধস আশ্রমের অবস্থান। ঐতিহাসিক মতে ব্রহ্মবৈবর্ত পূরাণে মেধস মুনির যে আশ্রমের কথা রয়েছে এটিই সেই আশ্রম। মর্ত্যলোকে এখানেই হয়েছিল দেবী দুর্গার প্রথম পূজা।
আগামী ১৪ অক্টোবর শুভ মহালয়া। ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
মেধস আশ্রমে সত্যযুগে ঋষি মেধসের নির্দেশে রাজ্য হারা সুরথ ও স্বজন বিতাড়িত সমাধি বৈশ্য দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে পূজা করেছিলেন। তবে সে পূজা বসন্তকালে হয়েছিল বলে তা বাসন্তী পূজা নামে প্রচলন ঘটে।
ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারে ও লঙ্কার রাজা রাবণকে পরাজিত করতে শরৎকালে অকাল বোধনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করেন। সে পূজা শারদীয়া দুর্গা পূজা হিসেবে খ্যাতি পায়।
কালের বিবর্তনে ঋষি মেধসের আশ্রম লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে ঋষি মেধস মুনি ও এ আশ্রমের কথা ‘চণ্ডী’সহ বিভিন্ন শ্রাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। আজ থেকে শতবছর আগে স্বামী বেদানন্দ যোগবলে বিলুপ্ত এ আশ্রম আবিস্কার করেন।
প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশে কয়েকটি পাহাড়ের সন্নিবেশে পবিত্র এ তীর্থভূমিতে চলে দেবী দুর্গার আরাধনা। সমতল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে মূল মন্দির। এ ছাড়াও রয়েছে চণ্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দির, কামাখ্যা মন্দির ও মানস সরোবর।
বোয়ালখালী পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস বলেন, মেধস আশ্রমকে জাতীয় তীর্থস্থান ঘোষণা ও এ আশ্রমকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
আশ্রমের অধ্যক্ষ বুলবুলনন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, সনাতন ধর্মাম্ববলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার উৎপত্তি এ মেধস আশ্রম। প্রতিবছর এ আশ্রমে মহালয়া উপলক্ষে দিনব্যাপী ধর্মীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। এবারও সেই লক্ষ্য নানা আয়োজন চলছে।
জেএন/পুজন/রাজীব