বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী প্রতিনিধি দল মধ্যস্ততা করতে আসেনি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা হয়েছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দুপুরে সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে বৈঠকটি হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিনিধি দল আমাদের বলেছে, তারা কোনো বিষয়ে মধ্যস্ততা করতে আসেননি। আমরাও বলেছি, আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে আমরা জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, তাদের কথাবার্তা পজিটিভ মনে হয়েছে। তারা কোনো পক্ষ নিয়ে এসেছে, এমন মনে হয়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আইআরআই ও এনডিআই এর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়নের জন্য এসেছেন। তারা অন্যান্যদের মতো আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১২ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। সেখানে আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। তাদের সঙ্গে শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে জাতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার, আমরা তা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে ৮২টি রিফর্ম সংস্কার শেখ হাসিনা সরকার করেছে, সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার যে অঙ্গিকার জাতির কাছে, সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
আওয়ামী লীগের তিনবারের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি যে অভিযোগ তাদের কাছে করেছে, তার জবাব আমরা তাদেরকে (প্রতিনিধি দলকে) জানিয়েছি। আমরা জানি যে বিএনপি সভা-সমাবেশ নিয়ে যেভাবে ভুল তথ্য পরিবেশন করে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে, সে ব্যাপারে আমাদের সঠিকতার বিষয়টি আমাদের অবশ্যই তাদের বলতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু দেশে আজকে এমন এমন গুজব, মিথ্যাচার চলছে, যার জবাব অবশ্যই রাজনৈতিক দল হিসেবে, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে অবশ্যই তার জবাব দিতে হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিনিধি দল অবশ্য বলেছেন, তারা কোনো বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে আসেনি। তারা এখানে একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চান, আমরাও বলেছি- আমরা একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ, জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ এবং আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রতিনিধি দলের কথাবার্তা আমাদের কাছে খুব পজিটিভ মনে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যেকোনো পক্ষ নিয়ে বা কোনো বায়াস এটিটিউট নিয়ে তারা আমাদের সাথে কথা বলেছেন- এমন নয়। আমাদের দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে আমি তো যাই না। যারা যান, তারা উপলব্ধি করতে পারেন, এখানে উপস্থাপক নিজেই একটা পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এই প্রতিনিধি দল কোনো পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি। তারা একটা ডেমোক্রেটিক পার্টি, আরেকটা রিপাবলিকান পার্টি। সে হিসেবে তারা এসেছেন, তারা এখানে অস্থিতিশীলতা এসেসমেন্ট করতে চান, সঠিকভাবে, আমরা তাদের কথাবার্তায় সেটাই বুঝেছি। ভায়োলেন্সের কোনো আশঙ্কা আছে কিনা এসব বিষয়গুলো তারা পর্যবেক্ষণ করছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা আসলে আমাদের মনোভাবটা জানতে চেয়েছে, পরিবেশটা জানতে চেয়েছে, আমরা আসলে কি করতে চাই, কি ধরণের ইলেকশন করতে চাই এবং ভবিষ্যৎটা কীভাবে দেখছি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের, এ বিষয়ে কথা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বলেছি, বিএনপি নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসব বিষয়গুলো বলেছে। তারা বলেছে, কম্প্রোমাইজ অ্যান্ড অ্যাডজাস্টমেন্টে কি কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? তখন আমরা বলেছি- কম্প্রোমাইজ অ্যান্ড অ্যাডজাস্টমেন্টে সেটারও স্পেস থাকতে হবে। কম্প্রোমাইজ অ্যান্ড অ্যাডজাস্টমেন্ট করার যে স্পেস, সেটা বিএনপি রাখেনি, ব্লক করে দিতেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। আমরা প্রতিনিধি দলের কাছে জানতে চেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবে?
আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা বলেন, তারা বিএনপি বা বিরোধী দলে আমাদের দেশে যা চলছে, সে বিষয়ে কিছু বলেনি। আমরা কি ধরণের নির্বাচন চাই, আমরা তাদের সেটা বলেছি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফারুক খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত। বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মারিয়া চিন বিনতে আব্দুল্লাহ।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটি ঢাকায় পৌছায়। রোববার (৮ অক্টোবর) থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। সফরের তৃতীয় দিন সোমবার সকালে বিএনপির সঙ্গে, এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে তারা।
গত শনিবার বিকেলে এবং রাতে দুই ভাগে প্রতিনিধি দলের সদস্যর ঢাকায় এসে পৌঁছান। প্রতিনিধি দলে সাতজন সদস্য রয়েছেন৷ প্রতিনিধি দলটি ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য এনডিআই-এর নীতিমালার ঘোষণা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে এ যৌথ প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) পরিচালনা করবে। প্রতিনিধি দলটি এক সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থানকালে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
জেএন/এমআর