২০০৭ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অভিষেকটা যদি জুলাই মাসের তিন থেকে চার মাস আগে হতো তাহলে হয়তো টানা ৫ বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড়ের তালিকায় তিনিও থাকতে পারতেন। কেননা বিশ্বকাপের মাত্র ৩ মাস পর জাতীয় দলে জার্সিতে শ্রীলংকা বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিলো মাহমুদউল্লাহ’র। সেবার ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে সাকিব, মুশফিক, তামিমরা গিয়েছিলেন নিজেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিতে। তবে জুলাই মাসে অভিষেকের কারণে তামিম সাকিবদের সঙ্গী হতে পারেননি রিয়াদ।
সাত সালের সেই বিশ্বকাপ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানের জন্য মিস করেছিলেন মাহমুদউল্ল্যাহ রিয়াদ। সে বছর জাতীয় দলে অভিষিক্ত হওয়া রিয়াদ কি কখনো ভেবেছিলেন এরপর তিনি আরো টানা ৪ টি বিশ্বকাপ খেলবেন। ২০১১, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২৩ চারটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা রিয়াদের মুখ ভর্তি দাড়িঁ। বয়সেয় ছাপ পেড়েছে দেহে, ৩৭ টি শীত, গ্রীষ্ম পার করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার। আর এই চলতি বিশ্বকাপে রিয়াদ যদি আন্তজার্তিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন তাহলে হয়তো অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না।
২০২৩ ভারত বিশ্বকাপের শুরুটা দারুণ ভাবে হলেও সে ধারাবাহিকতা থেকে ছিঁটকে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং ভারত তিন দলের বিপক্ষে বাজে ভাবে হারে টাইগাররা। বাংলাদেশ আর একটি ম্যাচ হারলেই গ্রুপ পর্ব থেকে ঢাকার ফ্লাইট ধরতে হবে সাকিবদের। তবে সব মিলিয়ে সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়াসহ আরো ৫ দলের বিপক্ষে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১১ নভেম্বর পুনেতে। আর এই পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়শন স্টেডিয়ামের মাঠে যদি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চিরবিদায় বলে দেন ক্রিকেটকে, নিরবে নিবৃত্তে, তাহলে এবারো অভিমানের বার্তা দিয়ে যাবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে।
চলতি বছরের চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর হুট করে বিশ্রাম দেওয়া হয় রিয়াদকে। আয়ারল্যান্ড সিরিজে ছিলো না রিয়াদের নাম। অথচ বিশ্বকাপ মুখী একটি দলের অন্যতম একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিলো নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই। অনেকটা মরিচীকার মতো বিসিবি নিশ্চিত হয়েছিলো রিয়াদের বিকল্প আছে দলে। সে ভরসায় এশিয়া কাপের স্কোয়াডে দেখা যায়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম। তবে রিয়াদের বিকল্পের উপর ভরসা করেও তার প্রতিদান না পেয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাকে দলে ফেরান বোর্ডের নির্বাচকরা। সে সিরিজে দুই ম্যাচে রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে মোট ৭০ রান। এরপর অনেকটা বাধ্য হয়ে শেষমেষ রিয়াদের উপর ভরসা রাখতে হয় নির্বাচকদের। তবে দীর্ঘ ৬ মাস ক্রিকেট থেকে দূরে থেকে রিয়াদ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাচ্ছেন না সেটিও অনেকটা নিশ্চিতও হয়ে গিয়েছিলো ক্রিকেট বোদ্ধারা। অথচ তখনো রিয়াদের ব্যাটিং গড় ৩৫ এর কাছাকাছি।
সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপের তুলনায় এবারের বিশ্বকাপ যাত্রাটা রিয়াদের জন্য একটু আলাদা। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে পারফর্ম করেও অদৃশ্য বাধাঁ ছিলো এই ডানহাতি ব্যাটারের সামনে। ৬ মাসের অভিমান বুকে নিয়ে বিশ্বকাপে নিজের কাজটাই করে যাচ্ছেন নিরবে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন ঠিকই তবে ব্যাটিং এ নামা হয়নি এই ব্যাটারের।ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রিয়াদকে যে যুক্তি দাঁড় করিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সে যুক্তি ভুল প্রমাণ হয়েছিলো পরের দুই ম্যাচে।নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাম্বার এইট পজিশনে ব্যাট করতে নেমে রিয়াদে ব্যাট এসেছিলো অপরাজিত ৪১। সে রানের সুবাধে দলীয় স্কোরটাকে সম্মানজনক জায়গায় নিতে পেরেছিলো সাকিবের দল। ভারতের বিপক্ষে ও সে রিয়াদই যেন বিপদের দিনের ত্রাতা। ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস বলে দিয়েছিলো রিয়াদকে দলে সংযোজন কোনো আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত নয় বরং বিবেকের তাড়নায় রিয়াদকে দলে প্রয়োজন।
তবে বারবার এভাবে মাহমুদউল্লাহকে অবহেলার সুযোগ তিনি আর দিবেন কিনা এই প্রশ্নটিও থেকে যায়। ২০২১ সালে যেভাবে দুই বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে, রিয়াদ কোনো কিছু না বলে, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে, বিদায় বলে দিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটকে, সে রিয়াদকে ওয়ানডে ক্রিকেটেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেনা কিনা সেটিও বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যদি সে অভিমানের পথে হাটেঁন তাহলে হয়তো চলতি বিশ্বকাপ যাত্রায় ক্রিকেটের ইতি টানবেন এই ক্রিকেটার।